• আন্দোলন শুরুর পর দেড় মাসে এই প্রথম, আউটডোরে ৪ হাজারের বেশি রোগী ‘ভরকেন্দ্র’ আর জি করে
    বর্তমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কর্মবিরতি ও আংশিক কর্মবিরতির দেড় মাসে এই প্রথম ৪ হাজারের বেশি রোগী হল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিন এমনিতেই আউটডোরে উপচে পড়া ভিড় থাকে। অভয়া কাণ্ড ও তারপর জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে গত দেড় মাসে সোম আর শনিবারে বিরাট ফারাক হয়নি। আউটডোরে কেমন রোগী এসেছিলেন আন্দোলনের মাসের সোমবারগুলিতে? ২ সেপ্টেম্বর এসেছিলেন ৩০১০ জন। ৯ তারিখ ৩০৬৯ জন। ১৬ সেপ্টেম্বর ১৮৪৩ জন। আর এদিন (সোমবার)? ৪১৬৯ জন! 


    এই দেড় মাসে সাধারণত দেখা গিয়েছে দুপুর ১টা-দেড়টা বাজতে না বাজতেই আউটডোর খাঁ খাঁ করছে। সেখানে এদিন ২টোর পরও ভিড় লেগেছিল বিভিন্ন তলায়। শনিবার থেকে জুনিয়র ডাক্তাররা ইমার্জেন্সিতে কাজে ফেরার পর এক অন্যরকমের জোশ দেখা গিয়েছিল। এদিনও আর জি করের ইমার্জন্সি দিনভর ছিল যথেষ্ট ব্যস্ত। 


    বছরের আর পাঁচটা স্বাভাবিক দিনে এখানকার আউটডোর বাড়ি, পুরনো ইমার্জেন্সি, ট্রমা সেন্টার, গাইনি বাড়ি—এইসব জায়গায় তিল ধারণের জায়গা থাকত না। ডাক্তারদের আন্দোলনে হাসপাতাল হয়ে উঠেছিল ফাঁকা কয়েকটি বাড়ির সমষ্টি। সেই শূন্যতা থেকে সোমবার অনেকটাই মুক্ত হয়েছে আর জি কর। হাসপাতালের এই জায়গাগুলিতে বিচ্ছিন্ন হলেও রোগী ও বাড়ির লোকজনের ভিড়ও ফিরে আসছে। ভিড় যে বেড়েছে, তার আর একটি উদাহরণ হল ট্রলির ব্যবহার বেড়ে যাওয়া। বছরের আর পাঁচটা স্বাভাবিক দিনে এখানে ২৪ ঘণ্টায় ৮৫-৮৬টি ট্রলি দু’বার করে ব্যবহার হত। মানে একবার নিয়ে ফেরত আসবার পর ফের আর এক প্রস্থ রোগী নিয়ে সেগুলি বেরত। বলতে গেলে ১৭০টি ট্রলির ব্যবহার হতো রোজ। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এই ট্রলি ব্যবহার তলানিতে ঠেকে। রোগীদের ট্রলি দেওয়ার জায়গায় ডাঁই হয়ে পড়ে থাকত সেগুলি। ২৪ ঘণ্টায় মেরেকেটে ৪০টি ট্রলি নিতেন রোগীরা। সেই সংখ্যা শনিবার থেকে বেড়ে হয়েছে প্রায় একশোর কাছাকাছি!  


    অন্ধকার নেমে আসা মুখে হাসি ফুটতে আরম্ভ করেছে ইমার্জেন্সি গেট লাগোয়া দোকানিদেরও। স্থানীয় বাসিন্দা চায়ের দোকানদার গোপাল পোদ্দার বললেন, ‘আন্দোলন-কর্মবিরতি শুরুর পর বিক্রিবাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। একজনমাত্র কর্মী ছিল। গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। দোকানও বন্ধ করে দিই। বেচাকেনা না-হলে খুলে রেখে লাভ কী? সপ্তাহখানেক হল দোকান ফের চালু করেছি। এদিন বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। আশা করছি, ক’দিন গেলে কর্মচারীকে ফেরত আনতে পারব।’ 


    পিজি  হাসপাতাল যেন সম্পূর্ণ ছন্দে ফিরেছে। হাওড়া থেকে এসেছিলেন খুকু দাস। বলছিলেন, ‘স্বামীকে মেডিসিনের ডাক্তার দেখালাম। দু’দিন আগেই আসার কথা ছিল। কিন্তু খবর দেখেই আর আসিনি। আজ এসে, ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যেই ডাক্তার দেখিয়েছি। এখন দাঁড়িয়ে আছি ওষুধের জন্য। এটুকু সময় তো লাগবেই।’ জামশেদপুর থেকে বাবু এসেছিলেন স্ত্রীকে পিজি’র ডাক্তার দেখাতে। ওষুধের লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘শুনেছি, এখানে ভালো ডাক্তার দেখেন। ওষুধ ভালো দেন। তাই এলাম।’
  • Link to this news (বর্তমান)