নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দুপুর তিনটে। চড়া রোদে রাস্তায় দাঁড়ানো যাচ্ছে না। একটু ছায়া পেলে ভালো হয়। পরক্ষণেই মেঘলা আকাশ। কিন্তু ঘাম কমছে না। যদিও এসব পাত্তা দিচ্ছেন না উত্সবে ভাসতে থাকা বাঙালি। তাঁরা নিউ মার্কেট চত্বরের উত্তাপকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দরদামে ব্যস্ত। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন হলেও ধর্মতলায় তিল ধারণের জায়গা নেই। প্রখর রোদে ক্লান্ত হয়ে গেলেই মেট্রোর সিঁড়িতে নেমে খানিক জিরিয়ে নিচ্ছেন বাজার করতে আসা মানুষেরা। কিন্তু বাজার যে তখনও শেষ হয়নি। তাই পরিবারের একদল যখন জিরিয়ে নিচ্ছেন, অন্য পক্ষ দেদার বাজার করে চলেছেন। হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ীদের মুখে।
আশ্বিনের শুরুতে এমন প্যাচপ্যাচে পরিবেশ কবে দেখেছে বঙ্গবাসী, তা ঠাহর করা দায়! নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী কিশোর লালের কথায়, ‘গরমে কাজ করতে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’ এই গরমেও বিকিকিনিতে প্রভাব পড়েনি। উল্টে ব্যবসা ভালোই হচ্ছে। পাইকপাড়ার বাসিন্দা ঝিমলি সাহা বলেন, ‘শুনছি বুধবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। আবার দু’তিন দিন বৃষ্টি চলবে। তখন কেনাকাটা হবে না।’ মেরেকেটে আর দু’সপ্তাহ বাকি রয়েছে পুজোর। এমনিতেই আন্দোলনের ঝাপটায় বেশ কয়েকটা দিন বরবাদ হয়েছে। কাজেই আর সময় নষ্ট করতে চায় না বাঙালি। উত্তর থেকে দক্ষিণ সব প্রান্তের বাজারেই উপচে পড়ছে ভিড়। রাসবিহারী মোড় থেকে গড়িয়াহাটের রাস্তায় গেলেই বোঝা যায়, পুজোর আর বাকি নেই। রাস্তার দু’পাশে বড় বড় হোর্ডিং পড়েছে। ডিজিটাল হোর্ডিংও দেখা গেল। ডিজিটাল হোর্ডিংয়ের সৌজন্যে রাস্তায় যেন ইতিমধ্যেই লাইটিং শুরু হয়ে গিয়েছে। নিউমার্কেট, হাতিবাগান-গড়িয়াহাট সর্বত্র ফুটপাত হকারদের হাঁকডাকে কল্লোলিত হতে শুরু করেছে। একেবারে ঘামে ভেজা গায়ে চলছে পছন্দসই জামা কিনে নেওয়ার যুদ্ধ। শ্রীরামপুর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বাজার করতে এসেছিলেন একদল কলেজছাত্রী। এই গরমে এত ভিড়ের মধ্যে ভালো লাগছে? প্রশ্ন শুনে কৃতিকা বিশ্বাস বলছিলেন, ‘বাজারের সময় গরম থাকবে। পুজোর সময় বৃষ্টি থাকবে। এইসব আমাদের সয়ে গিয়েছে। তা বলে বাজার করা যাবে না। এরকম কোনও ব্যাপার নেই। সবকিছুর মধ্যেই আনন্দ করতে হবে।’ সারাদিন রোদ থাকলেও বিকেল থেকে একটু হাওয়া দিচ্ছিল। কিন্তু তবুও ঘাম যেন আটকাচ্ছে না। নিউ মার্কেটের আইসক্রিমের দোকানে ভিড়ই বলে দিচ্ছিল পারদ চড়ছে। কিন্তু আর কোনও কিছুই যে মানুষকে আটকাতে পারবে না, সেকথা জানান দিল শহরের বাজারগুলি।
বিক্রেতাদের একাংশের বক্তব্য, লোকে বেশিরভাগই ‘উইন্ডো শপিং’ করে বেরিয়ে যাচ্ছেন। কিনছেন খুব কম। নিউ মার্কেটের এক বস্ত্র বিক্রেতা দুলাল বলছিলেন, ‘মাসের শুরু দিকে বাজারের যেমন পরিস্থিতি ছিল, সেই জায়গা থেকে অনেকটাই ভালো হয়েছে। মানুষ আসছে। বিক্রিও হচ্ছে।’ গড়িয়াহাটেও ব্যাপক ভিড়। ট্রাফিক পুলিস ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।