করোনাকালে নিভৃতবাসে থাকা এক ছাত্রীর কাছে ফোন এসেছিল— তখনই এক ‘দিদির’ সঙ্গে দেখা করতে হবে। ছাত্রীটি শুধু বলেছিলেন, ওই সময়ে কী করে যাবেন! সেই ‘অপরাধ’-এ হস্টেলে তাঁর ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। দশ দিন তিনি হস্টেলে ঢুকতে পারেননি।
তবে এ তো নেহাতই ‘নিরীহ’ অভিযোগ। কোনও কোনও ছাত্রী এমনকি এ-ও অভিযোগ করেছেন যে, কিছু ‘দিদি’ পুরুষ বন্ধুদের হস্টেলে ডাকিয়ে এনে অবাধ্য নবাগতাদের যৌন নিগ্রহ করাতেন!
জেএনএম সূত্রের খবর, ডিনের ই-মেলে সোমবার পর্যন্ত ৪৬টি এবং হাতে-হাতে আড়াইশোরও বেশি প্রমাণ-সহ অভিযোগ জমা পড়েছে। এক শিক্ষকের কথায়, “মেয়েদের ভিতরেও এই পর্যায়ে র্যাগিং চলতে পারে, আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। এরাও অখিল-আলিমদের চেয়ে কোনও অংশে কম যায় না!” আপাতত কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে নানা প্রমাণ-সহ ১৬ জিবির একটি পেনড্রাইভ জমা পড়েছে। তার মধ্যে ‘স্ক্রিন শট’ থেকে শুরু করে নানা ধরনের ভিডিয়ো রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
কল্যাণী জেএনএমে ‘থ্রেট সিন্ডিকেট’ চালানো ও দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি ৪০ জন পড়ুয়াকে ছয় মাসের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে অভীক দে-র ঘনিষ্ঠ শেখ অখিল যেমন আছেন, ১১ জন ছাত্রীও রয়েছেন। ওই ছাত্রীদের বিরুদ্ধেও জোর করে টাকা তোলা থেকে শুরু করে প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের গ্রন্থাগার ব্যবহার করতে না দেওয়া, কথা না শুনলে ঘরে তালা ঝোলানো, আসবাব ভাঙচুর, পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে গোলমাল পাকানোর অভিযোগ তো আছেই।
তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক অভিযোগ, পুরুষ বন্ধুদের ঘরে ডাকিয়ে নিয়ে এসে নবাগত ও অবাধ্য ছাত্রীদের ‘শায়েস্তা’ করা। কয়েক জন ছাত্রীর অভিযোগ অনুযায়ী, এই ‘শায়েস্তা’ করার বিষয়টি আসলে যৌন নিগ্রহ। তার জন্য তাঁদের ‘অস্বস্তিকর’ পোশাক পরে ওই পুরুষ বন্ধুদের সামনে যেতে বাধ্যও করা হয়েছে! কিন্তু এই নিয়ে মুখ খোলার সাহস কারও ছিল না, কোথাও লিখিত অভিযোগ জানানো তো দূরস্থান।
এই সব ‘দিদি’ অনেকেই তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার কমিটি’-র সদস্য, কেউ কেউ আবার প্রভাবশালী ‘দাদা’র ঘনিষ্ঠ। জেএনএম সূত্রের দাবি, ছাত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে ইন্টার্ন পূর্বা পুরকায়েত, তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রাইসা রায় ও সৃজনী দাসের বিরুদ্ধে। সোমবার রাইসা রায়কে ফোন করে পরিচয় দিতেই তিনি কোনও কথা না বলে ফোন কেটে দেন। সৃজনী এবং পূর্বাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। নবগঠিত অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটির আহ্বায়ক সৌগত বর্মণ বলেন, “কিছু ছাত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”