দুই বছরেরও বেশি সময় পরে বীরভূমে ফিরলেন অনুব্রত মণ্ডল। প্রথমে আসানসোল সংশোধনাগারে এবং তার পর প্রায় দেড় বছর দিল্লিতে তিহাড় জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। তিহাড় থেকে মুক্তির পর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের সঙ্গে সোমবার রাতের বিমানেই কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার ভোরে পৌঁছন কলকাতায়। দমদম বিমানবন্দরে অবতরণের পর ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ সোজা বীরভূমের উদ্দেশে রওনা দেন তৃণমূলের বীরভূম জেলার প্রাক্তন সভাপতি অনুব্রত। সঙ্গে ছিলেন সুকন্যা এবং অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ আরও কয়েক জন নেতা। সকাল ৯টা নাগাদ সড়কপথে বর্ধমান হয়ে বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়িতে ফেরেন তিনি।
জেলায় অনুব্রতর প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় সকাল থেকেই বোলপুরে নিচুপট্টির বাড়ির সামনে ভিড় জমতে শুরু করেছিল দলীয় কর্মী-সমর্থকদের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিড় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়িতে প্রবেশের সময় দৃশ্যত ছলছল চোখ ছিল অনুব্রতর। বাড়ির এক তলায় দলীয় কার্যালয়ে বসে কথা বলতে বলতে একটি পর্যায় কেঁদেও ফেলেন তিনি।
বীরভূমে ফেরার পথে বর্ধমান পার করে একটি জায়গায় কিছু ক্ষণের জন্য থামে অনুব্রতর গাড়ি। সেই সময় গাড়ির কাচ নামিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অনুব্রত। তিনি জানান শারীরিক সমস্যার কথা। পায়ে ও কোমরে ব্যথার কথাও জানান। তিনি বললেন, “আমি আদালতকে সম্মান করি, আইন মেনে চলি।” সঙ্গে এ কথাও বললেন, “দিদির জন্য আছি, বরাবরই থাকব।” মুখ্যমন্ত্রী এবং গোটা রাজ্যবাসীকে শারদীয়ার শুভেচ্ছাও জানান তিনি।
অনুব্রতর গ্রেফতারির পর মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “কেষ্টকে বীরের সম্মান দিয়ে ফিরিয়ে আনব।” ঘটনাচক্রে মমতারও মঙ্গলবার বীরভূম জেলায় প্রশাসনিক কর্মসূচি রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আবহে বীরভূমে প্রশাসনিক বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর। ঠিক সেই দিনেই কারামুক্তির পর বীরভূমে ফিরছেন অনুব্রত। দলনেত্রীর সঙ্গে কি মঙ্গলবার সাক্ষাৎ হবে অনুব্রতর? তা নিয়েও চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে। অনুব্রতকে সে প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় তিনি জানান, শরীর ভাল থাকলে দেখা হবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।
২০২২ সালের ১১ অগস্ট গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন অনুব্রত। সে দিন ছিল রাখি পূর্ণিমা। গ্রেফতারির পর প্রথম দিকে তিনি ছিলেন আসানসোল সংশোধনাগারে। পরে গরু পাচার সংক্রান্ত মামলাতেই ইডিও গ্রেফতার করে তাঁকে। সেই সময় তাঁকে আসানসোল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দিল্লিতে। রাখা হয়েছিল তিহাড় জেলে। গত সপ্তাহেই তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়। তবে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য জেলমুক্তিতে কিছুটা বিলম্ব হয় এবং সোমবার রাতে তিহাড় থেকে মুক্তি পান তিনি। ওই একই মামলায় মেয়ে সুকন্যাও কিছু দিন আগে জামিন পেয়েছেন। তবে বীরভূমে ফেরেননি। দিল্লিতেই ছিলেন, অনুব্রতর মুক্তির অপেক্ষায়। মঙ্গলবার পিতা, কন্যা একসঙ্গেই ফিরলেন বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়িতে।
অনুব্রতর জামিন নিশ্চিত হতেই বেশ সাজ সাজ রব ধরা পড়েছিল বীরভূমের নিচুপট্টি এলাকায়। দুই বছর দুর্গাপুজো তিনি ছিলেন না এই বাড়িতে। তবে এ বার পুজোর আগেই বোলপুরের বাড়িতে ফিরছেন তিনি। দিল্লির রাউস এভিনিউ কোর্ট থেকে জামিন নিশ্চিত হতেই অনুব্রতর বাড়িতে শুরু হয়েছিল রং করার কাজ, ঝাড়পোঁছ, আগাছা সাফাই।