আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার মামলার শুনানিতে ওই ছাত্রীর দেহের ময়না তদন্তের ‘বডি চালান’ পাওয়া যায়নি শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। যার জেরে দৃশ্যতই অস্বস্তি বেড়েছিল কলকাতা পুলিশের। তার পরেই শহরের একাধিক মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের তরফে লালবাজারে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছিল, অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ময়না তদন্তে অন্যান্য নথির সঙ্গে যেন ‘বডি চালান’ও দেওয়া হয়। সেই চিঠি পাঠানোর পরে কেটে গিয়েছে কয়েক সপ্তাহ। এখনও কলকাতা পুলিশ এলাকায় ‘বডি চালান’-এর পরিবর্তে ‘রিকুইজ়িশন ফর্ম’ জমা দিয়েই চলছে ময়না তদন্ত।
উল্লেখ্য, শীর্ষ আদালতের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছিলেন, বডি চালান ছাড়া কী ভাবে ময়না তদন্ত হতে পারে? সেই সময়ে সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছিল, তারা কোনও বডি চালান পায়নি। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, কলকাতা পুলিশ এলাকায় বডি চালানের পরিবর্তে রিকুইজ়িশন ফর্ম জমা দিয়ে ময়না তদন্তই দীর্ঘ কাল ধরে চলে আসছে। যদিও শুনানি শেষে এন আর এস, আর জি কর-সহ একাধিক মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের তরফে লালবাজার এবং সংশ্লিষ্ট থানাগুলিতে চিঠি পাঠানো হয়। তাতে ময়না তদন্তের ক্ষেত্রে অন্য নথির সঙ্গে বডি চালান পাঠানোর প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়েছিল।
কিন্তু বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগ সূত্রে জানা যাচ্ছে, চিঠি দেওয়ার পরে সপ্তাহখানেকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ময়না তদন্ত চলছে রিকুইজ়িশন ফর্ম জমা দিয়েই। শহরের একটি মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিনের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘সব কিছুর একটা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর (এসওপি) থাকে।ময়না তদন্তের ক্ষেত্রে বডি চালান এসওপি-র গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। কিন্তু কলকাতা পুলিশ কেন সেই চালান পাঠায় না, সেটা তারাই বলতে পারবে।’’
রাজ্য পুলিশ ময়না তদন্তের ক্ষেত্রে বডি চালান বা ফর্ম ৫৩৭১ ব্যবহার করলেও কলকাতা পুলিশ রিকুইজ়িশন ফর্ম ব্যবহার করে। এই দু’টির মধ্যে পার্থক্য কোথায়? জানা গিয়েছে, রিকুইজ়িশন ফর্মে মৃতের নাম, বয়স, মৃত্যুর সময়, কারণ লেখার নির্দিষ্ট জায়গা থাকে। তা ছাড়া, ঘটনাটি কোন থানা এলাকায় ঘটেছে, থানার তরফে কখন দেহটি পাঠানো হচ্ছে— উল্লেখ থাকে সেই তথ্যেরও। কিন্তু মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে কিনা, দেহে কী পোশাক ছিল, কোথায় দেহটি মিলেছিল, দেহের সঙ্গে কী কী এসেছিল— সে সব রিকুইজ়িশন ফর্মে লেখার ব্যবস্থা নেই। বডি চালানে এই সব তথ্য লিখতে হয়। আর জি করে চিকিৎসক-পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় এই তথ্যগুলি নিয়েই সর্বোচ্চ আদালতের তোপে পড়েছিল কলকাতা পুলিশ।
লালবাজারের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, ১৯৯৭ সালের পরে বডি চালান দেওয়া বন্ধ হয়।পরিবর্তে ময়না তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগে পাঠানো হয় রিকুইজ়িশন ফর্ম। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘বিষয়টি এমন নয় যে, হঠাৎ করে কয়েক মাস আগে বডি চালানের ব্যবহার বন্ধ হয়েছে কিংবা একটি মাত্র ঘটনার ক্ষেত্রে বডি চালান পাঠানো হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে যে পদ্ধতিতে দেহ হাসপাতালে পাঠানো হয়, সেই নিয়মই চলছে।’’