• ডুবেছে বাড়ি, গরম ভাতের টানে কলার ভেলাতেই পাড়ি
    এই সময় | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • দিব্যেন্দু সরকার, খানাকুল

    এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ভাত খায়নি ওরা। বাড়িতে এখনও এক কোমর জল। চাল-ডাল নেই, রান্না বন্ধ। তাই বাড়িতে জুটছে কেবল জল আর মুড়ি। স্কুল বন্ধ থাকায় জোটেনি মিড-ডে মিল। এলাকায় ত্রাণ আসার খবর পেয়ে দুটো ভাত খাবার লোভে কলার ভেলা চড়েই ছুটে এসেছিল ছোট ছোট একদল ছেলেমেয়ে। কিন্তু ত্রাণ শিবিরে ভাত নয়, শুকনো বিস্কুট আর এক চিলতে চকোলেট পেয়েই খুশির ঝিলিক ছোটদের মুখে। খানাকুলের বন্যাবিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ বিলি করতে এসে ছোটদের এমন দুর্দশা দেখে বিষণ্ণ হয়ে পড়েন বড়রাও।খানাকুলের ধরমপুর, সোনাটিকরি, মাইনান, ঘোষপুর, কুলাটের মতো একাধিক গ্রামে এখনও বন্যার জল নামেনি। সোমবার সেখানে ত্রাণ বিলি করতে এসেছিলেন আরামবাগ পুরসভার চেয়ারম্যান সমীর ভাণ্ডারী। ত্রাণ এসেছে খবর পেয়ে বন্যার জলের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কলার ভেলায় চেপে ছুটে আসে একদল ছোট ছেলেমেয়ে। এ দিন ত্রাণের মালপত্র নিতে আসা বন্যা মালিক, অনু মালিক, খুশি মালিক, শ্রেয়া গায়েনের মতো একঝাঁক শিশুকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদরাও।

    এই শিশুদের কেউ ক্লাস টু-থ্রি, কেউ বা প্রি প্রাইমারিতে পড়ে। স্কুলেও জল ঢোকায় মিড-ডে মিল বন্ধ। এ দিনও ভাত খাবার আশা পূরণ হয়নি ওদের। সোমবার দুপুরে এই এলাকায় নৌকো করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, ডাল, শুকনো খাবার দেন সমীর।

    তবে এ দিন ধরমপুরেই ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার সময়ে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায় চেয়ারম্যান সমীরকে ঘিরে। বিক্ষোভের জেরে এলাকা থেকে চলে আসতে বাধ্য হন তিনি। পরে সমীর বলেন, 'বিক্ষোভ থাকবেই। আরও ত্রাণ দেওয়া হবে। খানাকুলের একাধিক এলাকায় এখনও জল রয়েছে। যেখানে নৌকো আছে সেখানে ত্রাণ দেওয়া গেলেও ভিতরের গ্রামগুলিতে ত্রাণ পৌঁছচ্ছে না।' খানাকুলের বন্দর এলাকায় এ দিন ত্রাণ বিলি করেন আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী। তিনি বলেন, 'বন্যা কবলিত মানুষের জন্য তৃণমূলকর্মীরা কাজ করছেন।'

    পাশাপাশি এ দিন পুলিশ প্রশাসনও ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেয় বানভাসিদের হাতে। খানাকুলের প্লাবিত এলাকায় কমিউনিটি কিচেন তৈরি করে দুর্গতদের খাওয়ানো হয় পুলিশের তরফ থেকে। উপস্থিত ছিলেন হুগলি গ্রামীণ পুলিশের সুপার কামনাশিস সেন, আরামবাগের এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী-সহ থানার পুলিশ আধিকারিকরা। থানার পুলিশকর্মীরাই খাবার পরিবেশন করেন৷ আরামবাগের আইসি রাকেশ সিং নিজে বন্যা বিধ্বস্ত বাতানল গ্রাম পঞ্চায়েতের তেলুয়া গ্রামে হাজির হন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে। এই গ্রামে এখনও প্রচুর জল। দক্ষিণ নারায়ণপুরেও ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়।
  • Link to this news (এই সময়)