• জীবন পণ করে প্রাণরক্ষা, ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ড অচিন্ত্যকে
    এই সময় | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • রূপক মজুমদার, বর্ধমান

    জাতীয় সড়কে দাউদাউ করে জ্বলছে একটি মারুতি গাড়ি। ভিতরে থাকা দু’জন বাঁচার জন্য করছেন আর্ত চিৎকার। এমন সময়ে জীবন বাজি রেখে সেই জ্বলন্ত গাড়ি থেকেই একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন বর্ধমান জেলা পুলিশের তৎকালীন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর তথা বর্তমানে রায়না থানার সাব ইনস্পেক্টর অচিন্ত্য ঘোষ। উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিলেন স্থানীয় হোটেলের মালিক মিলন রায় ওরফে কালু। ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বরের সেই ঘটনায় অচিন্ত্যকে সিএম’স ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মান জানাল রাজ্য সরকার।বর্ধমান জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৩০ বছর পর জেলা পুলিশের কেউ সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত হলেন। ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ডের পাশাপাশি অচিন্ত্যকে ১ লক্ষ টাকার সম্মাননাও দিয়েছে সরকার। পাঁচ বছর আগে ঘটনার দিন সকাল ৭টা নাগাদ গলসি থানার গলিগ্রামের কাছে দুর্গাপুর যাওয়ার পথে তৎকালীন ২ নম্বর জাতীয় সড়কে (বর্তমানে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক) দুর্ঘটনাটি ঘটে।

    কুয়াশায় দৃশ্যমানতার অভাবে একটি লোহা বোঝাই ট্রেলার ওই মারুতি গাড়িটিকে ধাক্কা মারে। সে সময়ে জাতীয় সড়কে পুলিশ প্যাট্রলিংয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন তৎকালীন এএসআই অচিন্ত্য। বিকট আওয়াজে দ্রুত গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, গাড়ি ও ট্রেলারটি দাউদাউ করে জ্বলছে। গাড়ির টায়ারগুলি একের পর এক ফাটছে। ভিতর থেকে যাত্রীদের বাঁচার জন্য আর্তনাদের আওয়াজ পেয়ে আগুনের মধ্যেই উদ্ধারকাজে লেগে পড়েন তিনি। সঙ্গে ছিলেন মিলন।

    তিনি তাঁর হোটেল থেকে ৩০০ ফুটের পাইপ এনে জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালান। এর পরেই গাড়ির দরজায় লাথি মেরে ও হাত দিয়ে গেট টেনে বহু কষ্টে মহম্মদ আলি নামে একজনকে বের করে আনেন অচিন্ত্য। তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর পরে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে আটকে থাকা চালক রফিকুল আলমকে বের করার চেষ্টা করলেও আগুনের তাপে তা আর সম্ভব হয়নি।

    গাড়িতেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান খণ্ডঘোষের কেউদিয়া গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল। অচিন্ত্যর হাত ও শরীরের বেশ কিছু জায়গা পুড়ে যায়। আগুন লাগে তাঁর ইউনিফর্মেও। ‘এই সময়’-এ প্রকাশিত সেই খবরের জেরে সে বছর ২৭ ডিসেম্বর তৎকালীন পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় গলসি গিয়ে পুরস্কৃত করেন অচিন্ত্য ও মিলনকে।

    তিনি বলেন, ‘এখনও খারাপ লাগে সেদিন একজনকে বাঁচাতে পারিনি বলে।’ জেলার বর্তমান পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, ‘অচিন্ত্য খুবই ভালো কাজ করেছেন। ওঁর ফাইল দেখেছি। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও ওঁকে আমরাও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’
  • Link to this news (এই সময়)