‘টাকা আটকানোর নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয়’, পুজো অনুদান মামলায় হস্তক্ষেপ করল না হাই কোর্ট
প্রতিদিন | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গোবিন্দ রায়: দুর্গাপুজোর অনুদান সংক্রান্ত মামলায় কোনও নির্দেশ দিল না কলকাতা হাই কোর্ট। ইতিমধ্যেই যেহেতু পুজোর অনুদান পেয়ে গিয়েছেন তালিকাভুক্ত পুজো উদ্যোক্তাদের অনেকেই, তাই এনিয়ে জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে কোনও নির্দেশ দেওয়া হল না। ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে, এখন তা আটকানোর নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে পুজোয় সরকারি অনুদানের অঙ্ক বাড়লেও দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য চিকিৎসার বরাদ্দ খরচ কেন বাড়ানো হচ্ছে না, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতিরা।
সোমবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। আদালতের মতে, ‘‘রাজ্যে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য সরকার ১ হাজার টাকা দেয়। তাদের আরও বেশি প্রয়োজন। সেটা সরকার বিবেচনা করে দেখলে ভালো হয়।’’ শুধু তাই নয়, আদালতের চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়েও এদিন প্রশ্ন করেছে আদালত। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আদালতে চুক্তিভিত্তিক কর্মী অপসারনের ফলে বিচার ব্যবস্থা অসুবিধায় পড়ছে। আমার শপথ গ্রহণের সময় যখন মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন তখন এখানকার চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে সুরাহার দাবি জানিয়েছিলেন।’’
সম্প্রতি পুজোর অনুদানের হিসেব নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল হাই কোর্টে। মামলাকারীর দাবি, দুর্গাপুজোর জন্য গত কয়েক বছর ধরেই ক্লাবগুলিকে অনুদান দিচ্ছে রাজ্য সরকার। প্রতি বছর বাড়ছে সেই অনুদানের অঙ্ক। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পুজো সংগঠনগুলির সঙ্গে প্রস্তুতি বৈঠকেই ৮৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী বছর অনুদান বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। আইনজীবীর অভিযোগ, পুজোর অনুদান বেড়েছে, অনেক ক্লাব অনুদান ফিরিয়েও দিয়েছে। কিন্তু খরচের বিষয়ে সঠিকভাবে অডিট হচ্ছে না। বছরের পর বছর আদালত নির্দেশ দেওয়ার সত্ত্বেও জনগণের টাকা খরচের কোন হিসাব দেখানো হয় না। অর্থাৎ অনুদানের টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে, আদৌ পুজোয় খরচ হচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে কোনও নজরদারি নেই বলে দাবি তাঁর। এনিয়ে ক্যাগ রিপোর্ট পেশের আবেদন জানানো হয়েছে আদালতে।
আবেদনকারীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কার্যত কটাক্ষ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘৮৫ হাজার টাকায় কী হয়? ৮৫ হাজার টাকায় প্যান্ডেল বা পুজোর কোনও কাজ হওয়া সম্ভব না। রাজ্যের পুজো কমিটিগুলোকে কম করে ১০ লক্ষ টাকা দিন, ওই টাকায় খুব বেশি হলে একটা তাঁবু বানানো যেতে পারে, আর নাহলে কার্যকরী কমিটির সদস্যদের কাজে লাগতে পারে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি দুবছর পুজোয় ঘুরে দেখেছি যে এই টাকায় কিছু হয় না। অনুদানের টাকা কমপক্ষে ১০ গুণ বাড়ানো হলে সেটা পুজোর কাজে লাগতে পারে।” যদিও মামলার প্রেক্ষিতে এদিনই অনুদান নিয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি আদালত। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, যেহেতু এই মুহূর্তে যেহেতু টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই কারণে টাকা আটকানোর নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয়। এনিয়ে সব পক্ষকে হলফনামা আদানপ্রদানের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।