অবাঙালিরা, কিংবা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থেকে আসা লোকজন নাকি ক্রমশ ঘাঁটি গাড়ছে আমাদের এই রাজ্যে। উপযুক্ত নথি ছাড়াই নাকি তাদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বসবাসের পাকা প্রমাণপত্র!
বাংলা পক্ষের মতো সংগঠনগুলি মাঝেমধ্যেই এই ধরনের অভিযোগে সরব হয়। এবার তাদেরই তোলা অভিযোগের ভিত্তিতে আদতে বিহারের কিষাণগঞ্জ জেলার বাসিন্দা এক যুবককে স্থায়ী বাসিন্দার স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করল জলপাইগুড়ি মহকুমা প্রশাসন। তাঁর আবেদন বাতিল করে দিল জলপাইগুড়ির এসডিও অফিস।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বিহারের ওই বাসিন্দার নাম সনু কুমার। সম্প্রতি জলপাইগুড়ির এসডিও অফিসে তিনি একটি আবেদন জমা করেন। তাতে জলপাইগুড়ির স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে শংসাপত্র দেওয়ার আবেদন জানানো হয়।
এসডিও কার্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই আবেদনের প্রেক্ষিতে সনু কুমারের কাছে বিভিন্ন নথি চাওয়া হয়। দেখা যায়, সনু যে নথি জমা করেছেন, তার মধ্যে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত শংসাপত্র রয়েছে। সেগুলি থেকেই বোঝা যাচ্ছে, তিনি বিহার বোর্ডের অধীনে পড়াশোনা করেছেন।
এছাড়া, সনু একটি আধার কার্ডও জমা করেছেন। যাতে শিলিগুড়ির একটি ঠিকানা রয়েছে। তাঁর দাবি, তিনি নাকি গত ১০ বছর ধরে জলপাইগুড়িতে রয়েছেন। কিন্তু, সেই দাবির স্বপক্ষে কোনও অকাট্য প্রমাণ পেশ করতে পারেননি ওই যুবক। যার জেরে জলপাইগুড়ির এসডিও অফিস তাঁর আবেদন বাতিল করে দেয়।
এই প্রসঙ্গে বাংলা পক্ষের এক প্রতিনিধি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্র, যেমন - সেনাবাহিনী, আধাসেনায় চাকরি পাকা করতে অনেকই বাংলার জন্য বরাদ্দ কোটা ব্যবহার করছেন।
অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট চাকরিপ্রার্থী আদৌ পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা নন। তিনি হয়তো কোনওভাবে অন্য কোনও রাজ্য থেকে এসে এখানকার ডোমিসাইল সার্টিফিকেট জোগাড় করছেন।
এর ফলে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে বলেও নানা মহলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠনের আরও অভিযোগ, অনেক সময়েই অন্যান্য রাজ্যের বাসিন্দারা সেখানকার বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও দফতরের নথি জাল করে, তারই ভিত্তিতে বাংলায় ডোমিসাইল সার্টিফিকেট পেয়ে যাচ্ছেন।
এই বেনিয়ম রাজ্য সরকারেরও নজর এড়ায়নি। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ভিনরাজ্যের বাসিন্দারা যাতে ভুয়ো নথি পেশ করে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে স্বীকৃতি আদায় করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে তথ্য ও নথি যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হয়েছে।
জলপাইগুড়ির ঘটনাটির ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, নথি সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি হওয়াতেই ওই যুবকের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। কারণ, তিনি যে দাবি করেছেন, তা প্রমাণ করতে পারেননি।