চক্রব্যূহে আটকেছিলেন দ্রৌপদীও! এবার পুজোয় সেই গল্পই শোনাবে রেলপুকুর ইউনাইটেড
প্রতিদিন | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
পারমিতা পাল: মহাভারতের চক্রব্যূহ বললেই মনে পড়ে অর্জুনপুত্র অভিমন্যুর কথা। যিনি সেই জাল ভেদ করে ভিতরে ঢুকেছিলেন, বেরিয়ে আসতে পারেননি। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন, দ্রৌপদীও আটকে পড়েছিলেন চক্রব্যূহে! ব্যাসদেবের মহাভারতের সেই চক্রব্যুহ-আখ্যানই এবার ফুটে উঠছে রেলপুকুর ইউনাইটেড ক্লাবের দুর্গাপুজো মণ্ডপে (Kolkata Durga Puja 2024 Theme)। আর জি কর কাণ্ডের আবহে চক্রব্যূহের নতুন এক ব্যাখ্যাই তুলে ধরছেন শিল্পী সন্দীপ মুখোপাধ্যায়। পুজোর বার্তা, ‘পুরুষ তুমি ভয় হোয়ো না, নারীর ভরসা হও।’
কিন্তু কীভাবে চক্রব্য়ু হের সঙ্গে মিলে যায় দ্রৌপদীর আখ্যান? কীভাবেই বা তাঁর সঙ্গে মেলে আর জি কর কাণ্ড? আসলে শিল্পী পাঞ্চালির জীবনের লড়াইকে, অসহায়তাকেই মিলিয়ে দিয়েছেন চক্রব্যূহে আটকে পড়ার সঙ্গে। অর্জুনের গলায় বরমাল্য দিয়েও শাশুড়ির নির্দেশে পাঁচ স্বামীর পত্নী হতে হয়েছিল পাঞ্চালিকে। ভরা সভায় তাঁর চুলের মুঠি ধরে আছড়ে ফেলেছিল তুতো ভাসুরেরা। কখনও আবার জঙ্ঘায় বসতে আহ্বান জানানো হয়েছিল তাঁকে। অপমান-অসম্মানের চক্রব্যুহে জড়িয়ে পড়েছিলেন যাজ্ঞসেনীও। আর এই মুহূর্তে আর জি কর কাণ্ডকে ঘিরে উঠে আসে প্রশ্নগুলিও তিনি দেখতে চেয়েছেন দ্রৌপদীর এই লাঞ্ছনার সঙ্গে।
এবার ৭১তম বর্ষে পা দিচ্ছে বাগুইআটির রেলপুকুর ইউনাইটেড ক্লাবের পুজো। দুর্গা প্রতিমায় থাকছে নতুনত্বের ছোঁয়া। ঋষি-মহাঋষিদের আশীর্বাদে মায়ের সৃষ্টির মুহূর্ত তুলে ধরবেন মৃৎশিল্পী সুমন পাখিরা। আর মণ্ডপ বা প্রতিমায় প্রাণ দান করবে অমল রায়ের আলো। মণ্ডপে থাকছে কয়েক স্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মহিলাদের জন্য শৌচাগার, স্তনদান কক্ষও থাকছে। তৃতীয়ার দিন উদ্বোধন হবে মণ্ডপের। উদ্বোধন করবেন সনাতন রুদ্র পাল।
মায়ের আরাধনা মায়েদের সম্মান, স্বীকৃতির গল্পকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে পুজোর মণ্ডপ। আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় আতঙ্কের চোরাস্রোত বইছে প্রতিটি মেয়ের মনেই। রাতের আঁধারে অন্ধকার রাস্তায় কোনও ছেলেকে দেখলেই ভয়ে একবার হলেও বুক কেঁপে উঠছে তাঁদের। এমন পরিস্থিতিতে শিল্পী সন্দীপ মুখোপাধ্যায় মণ্ডপে ফুটিয়ে তুলছেন ‘বরাভয়ে’র বার্তা। পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে প্রচার সম্পাদক গৌরব বিশ্বাস জানান, “সমাজ গড়তে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেন মহিলারা। তাঁরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তৈরি করেন। তাই তাঁদের উন্নয়ন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাঁদের এগিয়ে যাওয়া দরকার। অথচ কিছু পুরুষ সেই রাস্তায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। চার দেওয়ালের অন্দরে মেয়েদের আটকে রাখতে চায়। সেই চক্রব্যূহ-ই আমাদের থিম।” গৌরববাবু আরও জানান, “মেয়েদের জীবনে পুরুষের ভূমিকা হওয়া উচিত কৃষ্ণের মতো। হস্তিনাপুরের রাজসভায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ আটকাতে এগিয়ে এসেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। প্রতিটি পুরুষের কৃষ্ণের মতো আচরণ করা উচিত। মেয়েদের অনুপ্রেরণা দেওয়া দরকার। সহযোদ্ধা হয়ে ওঠা দরকার।” সেই বার্তাই থাকবে মণ্ডপে।