প্ল্যানচেট করে কি আদৌ মৃত ব্যক্তির আত্মার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব? এই প্রশ্নের সঠিক জবাব আজও অজানা। বস্তুত, আদৌ কোনও দিন এর উত্তর পাওয়া যাবে কিনা, সেটাও জোর গলায় বলা যায় না।
এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু, সম্প্রতি আরজি কর কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে আবারও একবার প্ল্যানচেট নিয়ে নানা আলোচনা, সমালোচনা শুরু হয়েছে। সৌজন্যে এক শ্রেণির ইউটিউবার। যাঁরা দাবি করছেন, তাঁরা নাকি প্ল্যানচেটের মাধ্যমে নিগৃহীতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন!
এমনকী, গত ৮-৯ অগস্টের রাতে তাঁর সঙ্গে কী কী ঘটেছিল, সেসবও নাকি নিগৃহীতার আত্মা স্বয়ং এসে ওই ইউটিউবারদের জানিয়ে যাচ্ছেন!
বিজ্ঞানমনস্করা ইতিমধ্যেই এই ধরনের কনটেন্টের প্রতিবাদ করছেন। বাদ যাচ্ছেন না ভূত, প্রেত নিয়ে কাজ করা পেশাদার লোকজনও!
ভাবছেন তো, এটা কেমন হল? এই পেশাদাররা আবার কারা রে বাবা?
একটু ভেঙে বলি তাহলে। অনেকেই যেমন আধ্যাত্মিকতা, যোগ সাধনা, তন্ত্র সাধনা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রেতলোকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন বলে দাবি করেন, তেমনই আরও একদল মানুষ আছেন, যাঁরা ভূতের উপস্থিতি আদৌ আছে কিনা, কিংবা তেমন কিছু থাকা সত্যিই সম্ভব কিনা, তা জানতে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের সাহায্যে তদন্ত চালান।
পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে এহেন পেশাদারদের 'ঘোস্ট হান্টার', 'প্যারানরম্যাল ইনভেস্টিগেটর' ইত্যাদি নানা নামে অবিহিত করা হয়। আমাদের দেশে এমন প্রেত তদন্তকারীদের সংখ্যা তুলনায় কম হলেও তাঁরা আমাদের এখানেও আছেন। এমনই একটি সংস্থা রয়েছে আমাদের শহর কলকাতায়। নাম, 'ডিটেক্টিভস অফ সুপারন্যাচরাল'।
এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেবরাজ সান্য়াল বলেন, সত্যিই প্ল্যানচেটের মাধ্যমে কারও আত্মা টেনে আনা সম্ভব কিনা, তা তাঁর জানা নেই। কারণ, তাঁরা কখনও এমনটা করেননি।
তবে, অনেকেই এমনটা করতে পারেন বলে দাবি করেন। সেক্ষেত্রে অনেক নিয়ম, কানুন মানা হয়। যেমন - যাঁকে স্মরণ করা হচ্ছে, প্ল্যানচেটে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনও ব্যক্তি, বস্তুর উপস্থিতি। এমনকী, নির্দিষ্টু কোনও স্থান, যার সঙ্গে প্রয়াত ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে, তেমন জায়গাতেও অনেকে প্ল্য়ানচেটের আয়োজন করেন।
যদিও এতে লাভ আদৌ কিছু হয় কিনা, সেই বিষয়ে নিশ্চিত নন দেবরাজ। কিন্তু, আরজি কর কাণ্ডে যেভাবে নিগৃহীতার আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের দাবি করা হচ্ছে, তার তিনি তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
দেবরাজের বক্তব্য, এই ঘটনার সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষের আবেগ, সংগ্রাম জড়িয়ে রয়েছে। সেই আবেগ কাজে লাগিয়েই কিছু ইউটিউবার নিজেদের কন্টেন্টের ভিউ বাড়ানোর প্রচেষ্টা করছেন এবং তাতে তাঁরা সফলও হচ্ছেন।
উপরন্তু, এই ঘটনা আদালতের বিচারাধীন। তদন্ত প্রক্রিয়া এখনও চলছে। তারই মধ্যে 'নির্যাতিতার আত্মা'কে শিখণ্ডী করে নানা দাবি করা হচ্ছে, মন্তব্য করা হচ্ছে। যার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ভিত্তি নেই।
দেবরাজ মনে করেন, একটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও নৃশংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ধরনের আচরণ একেবারেই অনৈতিক ও অনভিপ্রেত। তিনি নিজেও যেহেতু অলৌকিক ঘটনার তদন্তের সঙ্গে বহু বছর ধরে যুক্ত, তাই তাঁর কাছে এক শ্রেণির ইউটিউবারদের এহেন আচরণ অত্যন্ত বেদনাদায়কও বটে।
তাঁর আশঙ্কা, এর ফলে বহু মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে এবং তাঁরা বিভ্রান্ত হবেন।