• কে মোবাইল ফেলে গেল ক্রাইম সিনে!
    এই সময় | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ম্যাট্রেসের নীচে পাওয়া গিয়েছিল একটি ব্লু-টুথ ইয়ারফোন। সেই সূত্রে আরজি কর হাসপাতালের তরুণী খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ব্রেক-থ্রু পেয়ে গিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। জালে পড়েছিল সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। ইয়ারফোনটি তারই ছিল বলে দাবি পুলিশের। ৯ অগস্ট হাসপাতালের সেমিনার রুমের 'সিন অফ ক্রাইম' থেকে ওই ইয়ারফোন-সহ ৪০টি জিনিস বাজেয়াপ্ত করে কলকাতা পুলিশ।আর ওই একই জায়গায় ছানবিন করার পরে, ১৪ অগস্ট সিবিআইয়ের গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে একটি মোবাইল! যা নাকি ঘটনার পর থেকে সেখানেই পড়েছিল! ওই ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের সূত্রে খুন-ধর্ষণের মামলার মোড় ঘুরে যেতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ। চিকিৎসকদের একাংশের প্রশ্ন, 'আগে কেন সিজ়ড হলো না সেটি? মোবাইল কোথায়, কী ভাবে পাওয়া পাওয়া গেল? ঘটনার দিন সঞ্জয়ের সঙ্গে কী আরও কেউ ছিল?'

    ইতিমধ্যেই আদালতে 'বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের' দাবি করেছে সিবিআই। সেই রহস্যের কিনারা করতে টালা থানার প্রাক্তন ওসি ধৃত অভিজিৎ মণ্ডল এবং আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ধৃত সন্দীপ ঘোষের পলিগ্রাফ এবং নার্কো টেস্ট করাতে চাইছে সিবিআই। ১৪ অগস্ট বাজেয়াপ্ত করা ওই মোবাইলের সিডিআর থেকে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন বলে সূত্রের খবর। এ বিষয়ে একশো শতাংশ নিশ্চিত হতে সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (সিএফএসএল) ওই ইলেকট্রনিক্স নথিগুলি যাচাইয়ের উদ্দেশে ওই মোবাইলটি পাঠানো হয়েছে বলে দাবি সিবিআইয়ের।

    সম্প্রতি সিএফএসএল-এ একটি 'আর্টিকল' পাঠাতে শিয়ালদহ আদালতে আবেদন জানিয়েছে সিবিআই। এই মোবাইলটি-ই সেই আর্টিকল বলে সূত্রের দাবি। ওই ঘরের 'থ্রিডি ম্যাপিং' করার সময় তা উদ্ধার হয় বলে তদন্তকারীদের দাবি। কেন তা পুলিশের নজরে এল না, তা নিয়েও রহস্য তৈরি হয়েছে? এর নেপথ্যে কি কোনও অভিসন্ধি রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

    এক প্রাক্তন পুলিশকর্তার বক্তব্য, 'ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় — ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া সামগ্রী, ফরেন্সিক টিম কত দ্রুত নমুনা সংগ্রহ করছে এবং কত দ্রুত এফআইআর করে তদন্ত শুরু করা হচ্ছে।' এই তিনটি বিষয়ে খতিয়ে দেখতে গিয়ে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারেরা পদে পদে 'ঠক্কর' খাচ্ছেন।

    সিবিআইয়ের দাবি, ৯ অগস্ট ঘটনার পর থেকে মামলা তাদের হাতে আসা পর্যন্ত বিভিন্ন জন এই ঘটনায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। কেন তা করা হচ্ছিল, তা জানতে একের পর এক ব্যক্তিকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। ময়নাতদন্তে কেন 'থ্রেট কালচার'? তিনি প্রথমেই বোমা ফাটিয়ে দাবি করেছিলেন, ঘটনার দিন দ্রুত ময়নাতদন্ত না করলে 'রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার' হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।

    ফরেন্সিক মেডিসিনের অধ্যাপক অপূর্ব বিশ্বাসের এই বক্তব্যের পরে শোরগোল পড়েছে। ময়নাতদন্তকারী দলে তিনজন ছিলেন। কেন তাঁকেই 'থ্রেট' করা হয়েছিল, উত্তর খুঁজছে সিবিআই। গত তিনদিন ধরে তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের সময়ে ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছিল। সেখানে পরিবারের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিতি ছিলেন। ওই ভিডিয়ো-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হুমকির অভিযোগ উঠেছে এক 'কাকা'-র বিরুদ্ধে। নির্যাতিতার 'কাকা' বলে পরিচিত প্রতিবেশী সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অবশ্য পরিবারের কেউ মুখ খোলেননি।

    তবে কি অন্য কেউ অপূর্বকে হুমকি দিয়েছিলেন? সকলের সামনেই, নাকি অন্য কোথাও? তখন কেন পুলিশকে তিনি বিষয়টি জানাননি? এত দিন পরে কেন মুখ খুলছেন? ময়নাতদন্ত নিয়ে অভিযোগ রয়েছে পরিবারের। নিহতের বাবা-মা তদন্তকারীদের কাছে অভিযোগ করেছেন, দ্বিতীয় বার পিএম-এর জন্য দেহ সংরক্ষণের আবেদন করেছিলেন তাঁরা। তা না শুনে পুলিশ-প্রশাসনের মদতে ময়নাতদন্ত থেকে শুরু করে পানিহাটির শ্মশানে দেহ সৎকারের প্রতিটি প্রক্রিয়ায় তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ এবং সঞ্জীব সক্রিয় ছিলেন। ইতিমধ্যেই নির্মলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

    সূত্রের খবর, এ বার ডাক পড়তে চলেছে সঞ্জীবেরও। গোলমাল? 'বেপাত্তা' ২ পিজিটি নজরে মঙ্গলবার সিজিও কমপ্লেক্সে দুই পিজিটি-কে তলব করে সিবিআই। এ দিন হাসপাতালের এমএসভিপি-র সঙ্গে একই গাড়িতে তাঁরা সিবিআই দপ্তরে পৌঁছন। ঘটনার পর থেকে তাঁদের কোনও 'খোঁজ' পাওয়া যাচ্ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তাঁরা কাজে যোগ দেন। গত ৯ অগস্ট ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল — সে বিষয়ে আরও তথ্য পেতে জুনিয়র ডাক্তার, পিজিটি-দের একটি তালিকা তৈরি করেছেন গোয়েন্দারা। নিহত তরুণী চেস্ট মেডিসিনের পিজিটি ছিলেন।

    তাঁর সহকর্মীরা এ বিষয়ে কিছু জানেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে পিজিটি-দের সঙ্গে কথা বলছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসারেরা। সূত্রের খবর, ঘটনার কয়েক দিন আগে পিজিটি-দের মধ্যে কোনও বিষয়ে গোলমাল হয়েছিল। তা জানতেন নিহত তরুণী। খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে তার কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে এই দু'জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

    এমএসভিপি সপ্তর্ষী চট্টোপাধ্যায় ফাইল হাতে সিবিআই দপ্তরে ঢোকার সময়ে বলেন, 'আমার কাছে বেশ কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল। সেগুলি দিতে এসেছি।' এ দিনই সিজিও কমপ্লেক্সে ঢুকতে দেখা যায় আরজি করের প্রাক্তন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠকেও। জানা গিয়েছে, দুর্নীতির মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেই প্রশ্নোত্তরের পর সিবিআইয়ের একটি দল আরজি করে পৌঁছয়। জানা যাচ্ছে, ৩টি আলমারি থেকে টেন্ডার সংক্রান্ত বেশ কিছু নথিপত্র তাঁরা বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যান।
  • Link to this news (এই সময়)