নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: ২৫ দিনের শিশুকন্যাকে জলভর্তি কুয়োয় ফেলে নিরুত্তাপ মা বারান্দায় বসে মনের খেয়ালে মোবাইলে গান শুনছিলেন। দোলনায় নাতনিকে না দেখে চিৎকার জুড়ে দেন দিদা। তাঁর চিৎকারে বাড়ির মালিক সহ অন্যরা চলে আসেন ভাড়াটিয়ার ঘরে। শিশুর মা’কে সকলে মিলে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই কুয়োর দিকে ইশারা করে মা অষ্টমী গোস্বামী। সকলে কুয়োর দিকে ঝুঁকতেই দেখেন কাপড়ে জড়ানো শিশুটি ভাসছে। তখনও প্রাণ ছিল। ভেসে আসছিল কান্নার আওয়াজ। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় দমকল বিভাগে। গভীর কুয়ো থেকে দমকল কর্মীরা যখন শিশুকে উদ্ধার করেন ততক্ষণে সব শেষ। যদিও সন্তান খুনে অভিযুক্ত অষ্টমী তখনও স্বাভাবিক।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ হাড়হিম করা ঘটনাটি ঘটে শিলিগুড়ি পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুকান্তপল্লিতে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন কাউন্সিলার দুলাল দত্ত। পরে শিলিগুড়ি থানার পুলিস এসে অষ্টমীকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। বাড়ির মালিক রতন সাহা বলেন, আট মাস আগে ওই দম্পতি ভাড়া আসে। মহিলার স্বামী নয়ন গোস্বামী পেশায় গাড়ির ড্রাইভার। প্রসবের পর থেকেই বধূ সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছিল। তাই নয়ন তাঁর মাকে সন্তান দেখভালের জন্য নিয়ে এসেছিলেন। শিশুকে ওর মা’র থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতেন পরিবারের সদস্যরা।
নয়ন বলেন, অষ্টমী যাতে কোনওভাবেই সন্তানের ক্ষতি করতে না পারে তারজন্য আমি এবং মা সবসময় ওর খেয়াল রাখতাম। কেন যেন মনে হতো মেয়েকে কুয়োয় ফেলে দেবে স্ত্রী। তাই কয়েকদিন আগে কুয়োটি প্লাস্টিক দিয়ে শক্ত করে ঢেকে দিই। কিন্তু, সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। একজন মা কীভাবে সন্তানকে খুন করতে পারে, ভাবতেই পারছি না।
নয়নের পিসতুতো দিদি লক্ষ্মী চক্রবর্তী বলেন, আমি পাশের বাড়িতে থাকি। ১০টা নাগাদ হঠাৎ চিৎকার শুনতে পাই। এসে শুনি ভাইঝি দোলনায় নেই। অষ্টমী মোবাইলে গান শুনছিল। ওকে চেপে ধরতেই কুয়োর দিকে ইশারা করে। কুয়োয় উঁকি দিয়ে দেখি কাপড়ে মোড়া অবস্থায় কিছু ভাসছে। ভালো করে লক্ষ্য করতেই কান্নার শব্দ পাই। দমকল কর্মীরা এসে কুয়ো থেকে ভাইঝির নিথর দেহ উদ্ধার করেন। কাউন্সিলার দুলাল দত্ত বলেন, ওই মহিলা মানসিকভাবে সুস্থ নন বলে মনে হচ্ছে। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিসের ডিসিপি (পূর্ব) রাকেশ সিং বলেন, ওই মহিলাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে।