• ক্রেতার দেখা নেই, খাঁ খাঁ করছে দোকানপাট
    আনন্দবাজার | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • পুজোর আর হাতেগোনা কয়েক দিন বাকি। এ দিকে, কেনাকাটার ভিড় নেই পোশাকের দোকানে। ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বারাসত ১, দেগঙ্গা, আমডাঙা ব্লকের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা। আর জি কর-কাণ্ডের জেরে লাগাতার আন্দোলন এর পিছনে কতটা কারণ, তা নিয়ে চলছে জল্পনা।

    ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত বছর মহালয়ার আগে এ রকম সময়ে বারাসতের জামা-কাপড়ের দোকানগুলি ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাসা থাকত। দেগঙ্গা, আমডাঙা ও বারাসত ব্লকের গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে বারাসত বাজারে আসেন পুজোর কেনাকাটা সারতে। শুধু তাই নয়, হাবড়া, অশোকনগর, মছলন্দপুর, বসিরহাটের বহু মানুষও বারাসতে আসেন পুজোর আগে। শহরে নামী-দামি সংস্থার জুতো, জামা-কাপড় সহ নানা শোরুম আছে। আছে বেশ কিছু বড় মল। ব্যবসায়ীদের দাবি, রাজ্যের পাঁচটি বস্ত্র বাজারের মধ্যে পড়ে বারাসতের বাজার। গত কয়েক বছর ধরে পুজোর সময়ে বারাসতের বস্ত্রবাজারের ব্যবসায়ীরা কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা করেছেন। তাঁদের দাবি, চলতি বছরে করোনা-পর্বের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

    কেনাকাটার একই ছবি দেগঙ্গা, দত্তপুকুর ও আমডাঙার জামাকাপড়ের দোকানগুলিতে। ব্যবসায়ীদের দাবি, বিশ্বকর্মা পুজোর পরে দোকান-বাজার ও মলে ক্রেতারা ভিড় করেন। বিশেষ করে, দুপুর গড়াতেই ভিড় বাড়ে। সকালের দিকে আসেন বনগাঁ, হাবড়া ও বসিরহাটের ক্রেতারা। দুপুরের মধ্যে কেনাকাটা সেরে তাঁরাকরে বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু এ বার সেই একেবারেই জমেনি বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

    আমডাঙা বাজারের ব্যবসায়ী সমীর বিশ্বাস, দেগঙ্গার প্রশান্ত মণ্ডল, দত্তপুকুরের বিধান দাসেরা বলেন, ‘‘ক্রেতাদের ভিড়ে হিমশিম খাওয়ার পরিস্থিতি এ বছর এখনও হয়নি। তবে অনেকে অনলাইনে কেনাকাটা করছেন বলে শুনছি। তবে সেই সংখ্যাটা খুবই কম।’’

    বারাসত বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, আর জি কর-কাণ্ডের জেরে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রতি দিনই বারাসত থেকে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদীদের কর্মসূচি হচ্ছে। সে কারণে অসংখ্য মানুষ কেনাকাটা করতে বেরোননি।

    বারাসতের ব্যবসায়ী অসীম আচার্য, সৌগত কর্মকর, রুদ্রদীপ বিশ্বাসেরা বলেন, ‘‘পাড়া ও পরিচিত মহলের অনেকেই বারাসত এবং কলকাতায় কেনাকাটা করেন। তাঁরা এখনও দোকানমুখো হননি। তবে মলগুলিতে তুলনায় কিছুটা ভিড় আছে।’’

    বারাসত ১, দেগঙ্গা ও দত্তপুকুর এলাকার টোটো এবং অটো চালকদের দাবি, গত বছরগুলিতে এই সময়ে যাত্রীদের হাতে নতুন জামাকাপড়ের থলে থাকত। গত এক মাসে তেমন ছবি সে ভাবে চোখে পড়ছে না। একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বারাসত শহরের টোটো-অটো চালকেরা।

    বাসিন্দাদের অনেকের দাবি, মূল্যবৃদ্ধির জেরে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্তেরা। কেনাকাটায় উৎসাহ কমার এটাও কারণ। দত্তপুকুরের জগদীশ রায়চৌধুরী পেশায় শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘দোকান-বাজারগুলি মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কেনাকাটার উপরে নির্ভরশীল। এই পরিবারগুলির তরুণ প্রজন্ম অনেকেই সে ভাবে আয় করতে পারছেন না।’’ বারাসত ১ , দেগঙ্গা ও আমডাঙা এলাকার বেসরকারি স্কুল পড়ুয়াদের কয়েক জন অভিভাবকের দাবি, সন্তানের শিক্ষার খরচ আর সংসার সামলাতে হিমশিম অবস্থা। দত্তপুকুরের বাসিন্দা অনির্বাণ ঘোষ বলেন, ‘‘এলাকায় মুদি দোকান আছে। কিন্তু বিক্রি কমেছে। এ দিকে দুই ছেলেমেয়েকে বারাসতের ইংরেজি মাধ্যম বেসরকারি স্কুলে পড়াচ্ছি। খরচ বেড়েছে। আয় কমেছে। কেনাকাটা এখনও করা হয়নি। অনলাইনে কম দামের জামা-কাপড় দেখা-শোনা চলছে। কেনাকাটার বাজেট গত দু’বছরের তুলনায় অর্ধেক কমিয়েছি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)