ভুল চিকিৎসার কারণে বিজেপি নেত্রীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল বালুরঘাট হাসপাতালে। বিজেপির অভিযোগ, পরিকল্পনা করে তাদের নেত্রীকে খুন করা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর জন্য হাসপাতালের সুপারকেই দায়ী করছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি নেত্রীর মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত হবে, আশ্বাস দিয়েছেন সুপার।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বিজেপি মোর্চার নেত্রী মামণি বর্মণকে সোমবার রাতে পেটে ব্যথা নিয়ে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সে সময় দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক দেবাশিস বিশ্বাস। তিনিই মামণির চিকিৎসা করেন। অভিযোগ, দেবাশিস কর্তব্যরত নার্সদের একটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরেই ওই বিজেপি নেত্রী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর।
মৃতার পরিবারের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসার কারণেই এই ঘটনা ঘটল। এমনকি তাঁকে যে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল, তা পরে প্রেসক্রিপশন থেকে কেটে দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। মৃত ওই মহিলা ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চক্রাম এলাকার বাসিন্দা। নেত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন দক্ষিণ দিনাজপুরের বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার-সহ অন্য নেতৃত্বেরা।
সোমবার বিকেলে মহিলা মোর্চার বালুরঘাট থানা অভিযান কর্মসূচিতেও যোগ দিয়েছিলেন মামণি। তার পর বাড়ি ফিরে হঠাৎ তিনি অসুস্থ বোধ করেন। শুরু হয় পেটব্যথা। জানা গিয়েছে, মামণি ডায়াবিটিসে আক্রান্ত ছিলেন। দেবাশিসের দাবি, যখন তাঁকে ভর্তি করানো হয় তখন তাঁর সুগার লেভেল যথেষ্টই বেশি ছিল। কী কারণে বিজেপি নেত্রীর মৃত্যু হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে ময়নাতদন্তের দাবি তুলেছে তাঁর পরিবার।
বাপির অভিযোগ, ‘‘পেটে ব্যথা নিয়ে রাতে হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু ১২ ঘণ্টা তাঁকে কোনও চিকিৎসক দেখতে আসেননি। আমাদের নেত্রীকে পুরো পরিকল্পিত ভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা মনে করছি এখানকার সুপার এবং তৃণমূলের দলদাস কিছু ডাক্তার ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাদের নেত্রীকে পরিকল্পনা করে খুন করেছে।’’ সুপারের পদত্যাগ এবং তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তুলেছে বিজেপি। বাপির কথায়, ‘‘একাধিক রোগীমৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে এই সুপার যুক্ত আছেন। বালুরঘাট হাসপাতালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পুরো ভেঙে দিয়েছেন তিনি। কী কারণে মৃত্যু হয়েছে, তার ময়নাতদন্ত করা হোক— সেই দাবি জানাচ্ছি আমরা। সুপারের কোনও মেরুদণ্ড নেই। আর যে ডাক্তারেরা আছেন, তাঁরা তৃণমূল নেতাদের খুশি করতে পারলেই যথেষ্ট।’’
বালুরঘাট হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দুবিকাশ বাগ এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমি যত দূর খবর পেয়েছি, উনি যে ডাক্তারের অধীনে ভর্তি ছিলেন তিনি চিকিৎসা করেছেন নিয়ম মেনেই।’’ তার পরই তিনি বলেন, ‘‘যদি গাফলতি হয়ে থাকে তবে অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। ময়নাতদন্ত হচ্ছে। সেই রিপোর্ট আমরা উচ্চ আধিকারিকদের কাছে পাঠাব। এটা নিয়ে রাজনীতি করার কোনও অর্থ নেই। যে কোনও রোগীর মৃত্যুই দুঃখজনক। আমরা একটি কমিটি গঠন করব। তারা তদন্ত করে দেখবে। তদন্তের রিপোর্ট দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’