• মৃতদের পরিবার পাবে ক্ষতিপূরণ, ঘোষণা মমতার
    এই সময় | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, বোলপুর: ডিভিসি কোনও আলোচনা ছাড়াই জল ছাড়ায় বাংলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে দু’দফায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতেও অবস্থার পরিবর্তন না-হওয়ায় ডিভিসি ও ডিভিআরআরসি থেকে পদত্যাগ করেছেন রাজ্যের দুই প্রতিনিধি। এই ইস্যুতে মঙ্গলবার ফের ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ও কেন্দ্রকে নিশানা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।বীরভূমে প্রশাসনিক বৈঠকের পরে মমতা বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার জলে বন্যা হয় না। ঝাড়খণ্ডের ছাড়া জলে প্রতি বছর বাংলায় বন্যা হয়। আমরা চাই না, মানুষ মারা কোনও সংস্থাকে। (ডিভিআরআরসি থেকে) আমাদের চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদত‍্যাগ করেছেন। বিদ্যুৎ সচিব শান্তনু বোস পদত‍্যাগ করেছেন (ডিভিসি বোর্ড থেকে)। কলকাতা থেকে তো সব সরিয়ে নিয়েছে। কলকাতায় একটা বিল্ডিং থাকবে (ডিভিসি অফিস)। আর কলকাতার কথা শুনবে না?’

    মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘মানুষ আগে না, একটা কাঠামো আগে? জল ছাড়ে জলশক্তি মন্ত্রক। ডিভিসি তৈরি হয়েছিল বন‍্যা থেকে মানুষকে বাঁচাতে। ওরা সব জল ছেড়ে দিচ্ছে। তিনতলা (বাড়ির) সমান জল। কুড়ি বছর ধরে ড্রেজিং করে না। মানুষকে জলে ডুবিয়ে মারে।’ ডিভিসি-র পাশাপাশি কেন্দ্রকে নিশানা করে মমতার অভিযোগ, ‘ইসিএল রঘুনাথপুরে একটি প্ল‍ান্ট বিক্রি করে দিচ্ছে। রেলে কী অবস্থা! প্রতিদিন ডিরেলমেন্ট? ডিরেলমেন্টে তো বিশ্ব রেকর্ড করছে ভারতীয় রেল।’

    গত কয়েক দিনে দক্ষিণবঙ্গে সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও এখনও অনেক জেলায় পরিস্থিতি বেহাল। রাজ্যের দাবি, এখনও পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। স্বজনহারা পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই সব পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেন।

    বীরভূমের লাভপুর, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনও জলমগ্ন। দু’দিনের জেলা সফরের শেষ দিনে মঙ্গলবার জেলার কয়েকটি জায়গার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুরে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যার কবলে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করবে সরকার।’ পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িও তৈরি করে দেবে রাজ্য। অন্তত ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মমতা।

    মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, যাঁদের ফসল বন্যায় নষ্ট হয়েছে তাঁদেরও শস্যবিমার আওতায় এনে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, চাষের জমি পুনরুদ্ধারের জন্য কী কী পদক্ষেপ করছে প্রশাসন, তা-ও জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘গ্রামীণ রাস্তার কাজ এ বার হবে বিধায়ক তহবিলের টাকা থেকে। ভেঙে পড়া স্কুলবাড়িরও সংস্কার হবে।’

    এরই মধ্যে এ দিন রাজ্য সরকারের গত ১৭ সেপ্টেম্বরের একটি মেমো সামনে এসেছে, যেখানে ডিভিআরআরসি ও কেন্দ্রীয় জল কমিশনের বিজ্ঞপ্তিকে উদ্ধৃত করে হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলাশাসকদের সতর্ক করেছিল রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর। আবহাওয়ার কারণে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারে জলস্তর দ্রুত বাড়ছে এবং ১৭ সেপ্টেম্বর ডিভিআরআরসি আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়বে বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল ওই মেমোতে। এর জেরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে তা মোকাবিলায় যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়ে রাখতে বলা হয়েছিল সেখানে।

    বিরোধীদের প্রশ্ন, রাজ্য সরকারের একটি দপ্তর এমন সতর্কবার্তা বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর পরেও কেন রাজ্য সরকার ডিভিসি কিছু জানায়নি বলে দাবি করছে? রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান সংবাদমাধ্যমকে জানান, ডিভিসি রাজ্য সরকারকে এই ব্যাপারে কিছু জানিয়েছিল কি না, সেই ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তবে তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে সংশ্লিষ্ট সব জেলাকে প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। মন্ত্রীর কথায়, 'মে মাস থেকেই আমাদের দপ্তরে বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।'
  • Link to this news (এই সময়)