• ১৯৪৮-এর ডিভিসি অ্যাক্টে রাজ্যের সরে আসা কি সম্ভব
    এই সময় | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • চাইলেই কি ডিভিসি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিরা? ১৯৪৮ সালে সংসদে পাস হওয়া ডিভিসি আইন অনুযায়ী বিষয়টি সহজ সরল নয় বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডিভিসি-র বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ বা ঝাড়খণ্ড সরকারের কোনও অভিযোগ থাকে তা হলে আইন অনুযায়ী বিষয়টিকে পাঠাতে হবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মনোনীত আরবিট্রেটর অথবা মধ্যস্থতাকারীর কাছে। সেখানেও সমস্যা না মিটলে পার্লামেন্টে পেশ করে সংশোধন করাতে হবে ওই আইন।রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির পিছনে ডিভিসি-র জল ছাড়ার সিদ্ধান্তকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী ডিভিসি-র সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি। এর প্রথম স্তর হিসেবে ডিভিসি ও ডিভিআরআরসি-র বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছেন রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ দপ্তরের সচিব ও সেচ দপ্তরের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার।

    এর পরেও জল ছাড়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ দপ্তরের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ারকেই চিঠি দিয়ে চলেছে ডিভিসি। এমনকী ২৪ তারিখেও মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে ২৫ হাজার পাঁচশো কিউসেক হারে জল ছাড়ার কথা লিখিত ভাবে ডিভিসি জানিয়েছে রাজ্যের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ারকে। পদত্যাগ করার পরেও কেন তা মানছে না ডিভিসি? সংস্থা থেকে সদ্য অবসর নেওয়া এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর সত্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ‘এই সময়’কে জানান, ১৯৪৮ সালে সংসদে পাস হয়েছিল ডিভিসি অ্যাক্ট।

    ওই আইনে বলা ছিল, ডিভিসি-র প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকলেও এর মূল সদস্য পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বতন বিহার বা বর্তমানের ঝাড়খণ্ড এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ডিভিসি। সত্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আইনে বলা হয়েছিল কী ভাবে ডিভিসি পরিচালিত হবে। ভবিষ্যতে এর অধীনে থাকা বাঁধগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গড়া হবে একটি উপদেষ্টা কমিটি। ১৯৬৪ সালে সেই উপদেষ্টা কমিটি হিসেবে গড়ে ওঠে ডিভিআরআরসি বা দামোদর ভ্যালি রিজ়ার্ভার রেগুলেশন কমিটি।’

    রাজ্য সরকার কি পদত্যাগপত্র পেশ করে ডিভিসি থেকে বেরিয়ে যেতে পারে? উত্তরে সত্যব্রত বলেন, ‘আইনের প্যারা ফাইভের ৩৯ নম্বর সেকশনে পরিষ্কার বলা আছে, প্রথমে সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস মনোনীত মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তি দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করবেন। যদি সমস্যা সেখানেই মিটে যায় ভালো, না হলে পরবর্তী ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বিষয়টি পাঠানো হতে পারে সংসদে। তার পরে লোকসভা ও রাজ্যসভায় আইন সংশোধন করাতে হবে।’

    যোগ করেন, ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণে তখন ১৪ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছিল। ডিভিসি আইনের প্যারা ফোরের ৩৬ নম্বর সেকশনে বলা রয়েছে, নতুন করে বন্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে হলে বিনিয়োগ করতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী মাইথন, পাঞ্চেত থেকে পলি তুলে সংস্কারের যে কথা বলছেন তার টাকা আইন অনুযায়ী রাজ্য সরকারকেই দিতে হবে।’

    শুধু বাঁধ নিয়ন্ত্রণ নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনও করে ডিভিসি। আইন অনুযায়ী ডিভিসি উৎপাদিত বিদ্যুতের লভ্যাংশের ৩৩ শতাংশ করে তিন ভাগে ভাগ হয়। যার এক ভাগ পায় পশ্চিমবঙ্গ। একই ভাবে খরিফ, রবি এবং বোরোচাষের জন্য ডিভিসি যে জল দেয় তার বিনিময়ে রাজ্য সরকারের থেকে ডিভিসি-র টাকা পাওয়ার কথাও বলা রয়েছে আইনে।

    ডিভিসিকে বেসরকারিকরণের পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে দুর্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে সত্যব্রতর বক্তব্য, ‘ডিভিসি আইন অনুযায়ী এটা সম্ভব নয়। বেসরকারিকরণ করতে গেলে সংসদে নতুন করে আইন পাস করাতে হবে। সেটা না হলে ডিভিসি-র বেসরকারিকরণ হবে না।’
  • Link to this news (এই সময়)