গোবিন্দ রায়: সিনেমাতে সুযোগ দেওয়ার টোপ দিয়ে এক নাবালিকাকে ফুঁসলিয়ে মুম্বইয়ে পাচারের অভিযোগ উঠছিল বসিরহাটের হাসনাবাদে। পাচারকারীদের ডেরা থেকে পালিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাল নাবালিকা। পরে মহারাষ্ট্রের রেল পুলিশের সহযোগিতায় হাসনাবাদ থানার পুলিশ ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে। সোমবার রাতে ভিন রাজ্য থেকে বাংলায় নিয়ে আসা হয়। ঘটনায় পাচার চক্রের ‘মিডল ম্যান’ সন্দেহে তনুজা বিবিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁকে বসিরহাট আদালতে তোলা হলে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী হাসনাবাদ থানা এলাকার কৃষক পরিবারের মেয়ের ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল সিনেমায় অভিনয় করা। অভিযোগ, নায়িকা হওয়ার তাঁর সেই স্বপ্নপূরণে আশ্বাস দিয়েছিল ধৃত তনুজা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মুম্বইতে নিয়ে গিয়ে সিনেমার সুযোগ করিয়ে দেওয়ার। কিন্তু বসিরহাটের ঘোষ বাড়িতে পরিচয় হওয়া দিদি যে আসলে পাচারকারী তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি নাবালিকা। তাই পরিবারের লোকেদের নজর এড়িয়ে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ‘দিদি’র হাত ধরেই পাড়ি দেয় মুম্বইয়ে। কিন্তু ধৃত তনুজার উদ্দেশ্য ছিল, এই নাবালিকাকে নিয়ে গিয়ে কোনওভাবে মুম্বইতে পা রাখা। তাহলেই তাঁর কাজ শেষ। অন্য একটি দল এসে দুই নাবালিকাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল সে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে পালায় নাবালিকা। হাওড়া থেকে মুম্বইয়ের উদ্দেশ্যে ট্রেন রওনাও দিয়ে দিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয় পুলিশ। খবর দেওয়া হয় রেল পুলিশকে। জানা যায়, এর মধ্যে নাবালিকা পাচারকারীদের গোপন ডেরা থেকে পালায়। মহারাষ্ট্রের কুরালা জিআরপির কাছে আশ্রয় নেয় সে। তাকে স্থানীয় একটি হোমে রাখা হয়। জানতে পেরে থানার আইসি গোপাল বিশ্বাসের নেতৃত্বে বিশেষ দল নাবালিকাকে উদ্ধার করে। আইসি জানান, “মেয়েটি কোনওভাবে পালিয়ে না আসলে পুলিশের পক্ষে ওদের খুঁজে বের করা অনেক কঠিন হয়ে যেত।” নাবালিকা উদ্ধারে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়ায় স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তার সদস্য তসলিমা খাতুন জানান, নিখোঁজ মেয়েকে পেয়ে খুশি পরিবার। কিন্তু এই নাবালক-নাবালিকাকে আরও সমাজ সম্পর্কে সচেতন করার প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি জানান। আগামীতে এই নাবালিকার পড়াশোনা ও কাজের উদ্যোগ নিয়েও আশাবাদী তিনি।