ঘরে ফেরা ইস্তক কোনও রাজনৈতিক মন্তব্য করেননি তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। ১৮ মাস পর জামিনে মুক্তি পেয়ে মঙ্গলবার সকন্যা বাড়ি ফিরেছেন তিনি। অনুগামীদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ ছাড়া দলের বড় কোনও নেতার সঙ্গে মুখোমুখি কথাবার্তা বলেননি বীরভূম জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি। তবে বুধবার বিকেলে তিনি আবার বোলপুর দলীয় কার্যালয়ে যেতে পারেন। সেই খবর পেয়ে সাজ সাজ রব কার্যালয়ে। অনুব্রত মণ্ডলের একের পর এক ছবি দিয়ে ভরানো হচ্ছে দলের কার্যালয় । এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সরানো হল জেলা কোর কমিটির সদস্যদের ছবি। যে কমিটি তৈরি করেছেন খোদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১৮ সালে বীরভূম জেলা তৃণমূল ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন অনুব্রতই। প্রায় প্রতি দিন নিয়ম করে এখানে বসতেন তৎকালীন জেলা সভাপতি। বুধবার সকালে দেখা গেল তৃণমূল নেতার ছবি দিয়ে সাজানো হচ্ছে কার্যালয়। কোনও কোনও ছবিতে কেষ্টর পাশে রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু জেলা তৃণমূলের অন্য কোনও মুখের জায়গা নেই সেখানে। মেঝে জীবাণুমুক্ত হচ্ছে ফিনাইল দিয়ে। রাজমিস্ত্রিরাও কুরনি হাতে ব্যস্ত। দরজার গ্রিল, কার্যালয়ের গেটও রং করা হচ্ছে। সাগর হাজরা নামে ব্যস্ত এক রংকর্মী বললেন, ‘‘দাদার নির্দেশ।’’ আর কোনও কথা না বলে মন দিয়ে রং করা শুরু করলেন তিনি। রাজেশ মিদ্যা নামে এক জন কর্মী বললেন, ‘‘গতকাল আমাদের শ্রদ্ধেয় দাদা ফিরেছেন। তাই নির্দেশমাফিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সাজানোর কাজ চলছে।’’ তিনি জানালেন, শুধু অফিসের ভিতরে অনুব্রতের ন’টা ছবি টাঙানো হচ্ছে।
অনুব্রতের জেলযাত্রার কিছু দিনের মধ্যে তাঁর ছবি সরানো হয়েছিল কার্যালয় থেকে। তার পর জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্যদের ছবি টাঙানো হয়। দেওয়ালে ছিল অভিজিৎ সিংহ, চন্দ্রনাথ সিংহ, সুদীপ্ত ঘোষ, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। মমতা-অভিষেক ছাড়া ওই সব ফটোই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেষ্ট ফেরার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বোলপুরের দলীয় কার্যালয় কার্যত অনুব্রতময়। প্রশ্ন উঠছে, বীরভূম জেলা রাজনীতিতে কি আবার ‘ওজনদার’ হওয়ার চেষ্টা করছেন অনুব্রত? জেল থেকে ফিরে কি আবার ‘গড়’ সাজানোর চেষ্টা করছেন? বস্তুত, মঙ্গলবারই কেষ্টর সঙ্গে কয়েক জনের নেতার ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যাঁদের মধ্যে অন্যতম চন্দ্রনাথ সিংহ। কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথের সঙ্গে বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী অনুব্রতের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরে তাঁরা ফিরে যান। অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, তাঁদের সঙ্গে পরে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা। অন্য দিকে, মঙ্গলবারই কেষ্টর বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিন্তু তাঁর মুখে কেষ্টর নাম শোনা যায়নি। তৃণমূল নেতা বাড়ি ফেরার পর তাঁর সঙ্গে নেত্রীর দেখা হবে কি না, এ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়নি দু’জনের।
মঙ্গলবার অল্প খাওয়াদাওয়ার পর রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে চলে যান অনুব্রত। বেলা করে ওঠা অভ্যাস তাঁর। বিকেলে কার্যালয়ে বসে কি পুরনো মেজাজে দেখা যাবে তৃণমূল নেতাকে? আবার জল্পনা।