• ‘ফাইবারের ঢাক জোরে বাজে, কিন্তু কোমর দোলে না’
    বর্তমান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • কুন্তল পাল, বনগাঁ: এখনও মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাক বাজে। তবে ঢাকের শব্দের সে মিষ্টত্ব আর অবশিষ্ট নেই। কিছু আগেও কারও হাতে ঢাক যেন কথা বলে উঠতে। কারও হাতে বোল ফুঠে উঠলে মেঘের গর্জন শোনা যেত। কেউ ঢাক বাজালে কোমর আপনেআপ উঠত দুলে। তখন আম কাঠের তৈরি বিশাল খোলের উপর পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি হতো ঢাক। এখন তার জায়গা নিচ্ছে ফাইবার। টিনের কাঠামোর উপর ফাইবারের ঢাকের বাদ্যি জোরে বাজে বটে কান ঝালাপালাও করে দেয় কিন্তু সে মিষ্টত্ব নেই। তবে ফাইবারের ঢাকের দাম কম। রক্ষণাবেক্ষণের খরচও কম। ফলে কাঠের ঢাক ছেড়ে সবাই ঝুঁকছেন ফাইবারের দিকে। আর ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে আম কাঠের মিঠে বোল। জায়গা নিচ্ছে ফাইবারের তারস্বর।


    পুজো মরশুম শুরু হলে ঢাকিদের ব্যস্ততা বাড়ে। সারা বছর তুলে রাখা ঢাকগুলি ঝেড়েমুছে, মেরামত করে রোদে দেন। অনেকে যান নতুন কিনতে। বনগাঁ নিউমার্কেট এলাকায় বহু ঢাক ব্যবসায়ী রয়েছেন। দোকান রয়েছে। সেখানে এখন চরম ব্যস্ততা। সেখানে সবই টিন ও ফাইবারের ঢাক। বিক্রেতা সুমন দাস বলেন, ‘এক সময় ছিল চামড়ার ঢাকের চাহিদা। বর্তমানে তা নেই। সে জায়গা দখল করেছে ফাইবারের ঢাক। এগুলির রক্ষণাবেক্ষণে খরচ কম। ফলে চাহিদা বেড়েছে।’ তিনি জানালেন, ভালো মানের একটি চামড়ার ঢাক তৈরি করতে হাজার পাঁচেক টাকা খরচ হয়। সেখানে আড়াই হাজার টাকায় মেলে ফাইবার। সারা বছর ফেলে রাখলেও সে ঢাকের তেমন ক্ষতি হয় না। অন্যদিকে অনেক যত্নে রাখতে হয় চামড়ার ঢাককে। 


    প্রায় ৪০ বছর ধরে ঢাক বাজাচ্ছেন বনগাঁ শক্তিগড়ের বিষ্ণুপদ দাস। তিনি বলেন, ‘চামড়ার ভালো ঢাক তৈরি করতে অনেক টাকা লাগে। আম কাঠের হওয়ায় তা ভারীও হয়। অনেক হাল্কা ও কম দাম ফাইবারের ঢাকের।’ ঢাকিদের অনেকেরই মত, ‘এখন পুজো উদ্যোক্তারা আর ঢাকের শব্দের মাধুর্য খোঁজেন না। অনেকে তো রেকর্ড করা ঢাকও বাজিয়ে দেন। সে কারণে আমরাও ঢাকের গুণগত মান নিয়ে ভাবি না।’ ওস্তাদ হাতে বাজলে নাকি ঢাকের বোলে শব্দ গেঁথে বসতো। ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’ আলাদা করে যেন কানে আসত সবকটি শব্দ। ঢাকের সে হাত কোথায়? সে ঢাকই বা কোথায়? তবে অনেকের বক্তব্য, মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে খুঁজলে এখনও দেখা মিলবে সেরকম ঢাকির। যাঁর হাতে এখনও কথা বলে চলেছে আমকাঠের ঢাক। সে গুণী মানুষগুলি হারিয়েই যেতে বসেছেন প্রায়।
  • Link to this news (বর্তমান)