রাজ্যের উদ্যোগে সমাজের মূল স্রোতে ফিরছে চিত্রকর সম্প্রদায়
বর্তমান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: তাঁদের উপাধি চিত্রকর। পেশা বিভিন্ন পৌরাণিক, ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বন করে পটচিত্র আঁকা। কাশীপুর ব্লক এলাকার সেই চিত্রকরেরা পট দেখিয়ে, ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন কাটাতেন। নিজেদের বাসস্থান বলে কিছুই ছিল না। পরিবার নিয়ে রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড সহ বিভিন্ন জায়গায় ত্রিপল খাটিয়ে বসবাস করত। শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য সবকিছুতেই তাঁদের ছিল অনীহা। প্রতিটি পরিবারের শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগত। বাম সরকার অবশানের পর সেই চিত্রকর পটশিল্পীদের জীবনে পরিবর্তন এনেছে তৃণমূল সরকার। আগে যাঁরা দু’বেলা ঠিক মতো খাবার খেতে পেত না এখন তাঁরা আনন্দের সাথে পরিবার নিয়ে দিন কাটায়। তৃণমূল সরকার আসার পরেই কাশীপুরের মাজুরা মুড়া এলাকার পটচিত্র শিল্পীদের জীবনে পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
মাজুরামুড়া এলাকায় একটি বিশাল মাঠকে ঘিরে তাঁদের গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে। তাঁরা উদ্বাস্তু হওয়ায় নিজস্ব জমি ছিল না। সরকারের তরফ থেকে প্রতিটি পরিবারকে ৫ডেসিমেল করে জমি দেওয়া হয়েছে। সেই জমির উপর জেলা ও ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের গীতাঞ্জলি আবাসে ২০১২-’১৩ অর্থবছরে প্রত্যেক পরিবারের জন্য টয়লেট সহ বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। মোট ৬৫টি পরিবারের হাতে জমির কাগজ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেক বাড়িতে দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ। যেখানে আজও বিদ্যুতের কোনও খরচ তাঁদের দিতে হয় না। যাতায়াতের জন্য পথশ্রী প্রকল্পে পাকা রাস্তা, সকলের হাতে এখন রেশন কার্ড। ১৩জনকে দেওয়া হয়েছে শিল্পী ভাতা। প্রতি মাসে অ্যাকাউন্টে ঢুকছে ১০০০ টাকা। মহিলারা পান লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধা। এছাড়া বৃদ্ধভাতা, বিধবাভাতাও মিলছে। পানীয় জলের জন্য নলকূপ, ডিপ টিউবওয়েল করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার বিস্তার ও পুষ্টির বিকাশের জন্য গ্রামে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে। এখন শিশুরা স্কুলমুখী হয়েছে।
বয়স্করাও ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে কেউ দিনমজুর, কেউ চাষবাস করে জীবন কাটাচ্ছে। গ্রামের বাসিন্দা করুণ, মানিক, জিতেন চিত্রকরেরা বলেন, একসময় পট দেখিয়ে বাড়িতে বাড়িতে ভিক্ষা করে বেড়াতাম। সরকার এখন আমাদের শিল্পী ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমরা আত্মসম্মান ফিরে পেয়েছি।
উজ্জ্বল চিত্রকর, সুরধ্বনি চিত্রকর বলেন, বাচ্চারা সকালে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খাবার পায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। সেখানেও মিড-ডে মিল পায়। আমাদের এখানে সরকার সবকিছুই করে দিয়েছে। তবে একটা পুকুরের খুব প্রয়োজন রয়েছে। কাশীপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা পরিষদ সদস্য স্বপন কুমার বেলথরিয়া বলেন, ওঁরা ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন কাটাতেন। ফাঁকা মাঠে খোলা আকাশের নীচে পড়ে থাকতেন। ওঁদের নিজের বলে কিছুই ছিল না। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরই ওদের জন্য চিন্তা করা হয়। ওঁরা ভিক্ষে করা ছেড়ে দিয়ে নিজেরা পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কাশীপুরের বিডিও সুপ্রিম দাস বলেন, এলাকার উন্নয়নের জন্য আমরা সবরকম সহযোগিতা করি। সেখানে বেশ কিছুটা রাস্তা খারাপ রয়েছে। দ্রুত তা পাকা করা হবে।