নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে চরমে উঠেছে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত। চলছে তুমুল রাজনৈতিক চর্চা। তার মধ্যেই সামনে এল অবাক করা এক তথ্য—বন্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার পশ্চিমবঙ্গ। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইরিগেশন অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টে (ডব্লুবি-এমআইএফএমপি) ঋণ বরাদ্দের মাত্র ৭১৭ কোটি টাকা এসেছে রাজ্যের কোষাগারে। এখনও বকেয়া প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। জলশক্তি মন্ত্রকের সাম্প্রতিক বার্ষিক প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে এই তথ্য। ডিভিসির ক্যানালে সেচ ব্যবস্থার পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং রাজ্যের বন্যা নিয়ন্ত্রণে এই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল। আগামী বছরই সেটির কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু টাকা না আসায় তা আদৌ সম্ভব হবে কি না, ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্র তথা দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের (ডিভিসি) দিকে আঙুল তুলেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, অনিয়ন্ত্রিতভাবে জল ছাড়ার কারণেই সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। ‘ম্যান মেড বন্যা’ নিয়ে তিনি চাপ বাড়াতেই শেষপর্যন্ত উদ্যোগী হয়েছে মোদি সরকার। ডিভিসি কর্তৃপক্ষের তরফেও কর্মীদের একদিনের বেতন বন্যাত্রাণে দান করার আবেদন জানানো হয়েছে এদিন। শুধু তা-ই নয়, ড্যামেজ কন্ট্রোলে পাঠানো হচ্ছে বিশেষ প্রতিনিধি দল। টিমে থাকছেন জলশক্তি মন্ত্রকের অধীন গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশনের তিন সদস্য। মূলত সুন্দরবন সহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যা রোধের পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যেই পরিদর্শন চালাবেন তাঁরা। মানুষের ক্ষোভে প্রলেপ দিতেই কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ বলে মত রাজনৈতিক মহলের। সূত্রের খবর, সুন্দরবনের আয়লা বাঁধ প্রকল্পের বেশ কিছু কাজ এখনও থমকে। সম্প্রতি সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে তা সম্পূর্ণ করার নয়া পদ্ধতি বের করেছে রাজ্য সেচদপ্তর। কেন্দ্রীয় টিমের পরিদর্শন নিয়ে তাই আশায় বুক বাঁধছে রাজ্য। এছাড়া সুন্দরবনকে রক্ষা করতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় আপার ডেল্টা প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজ্য। এর জন্য প্রয়োজন কেন্দ্রীয় ছাড়পত্রের। কেন্দ্রীয় টিমের কাছে সে তথ্য তুলে ধরা হবে।
এসবের মধ্যেই জলশক্তি মন্ত্রকের বার্ষিক প্রতিবেদনে ‘বকেয়া তথ্য’ উদ্বেগ বাড়িয়েছে নবান্নের। প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রের তরফে পর্যাপ্ত অর্থ না আসার কারণেই কি বন্যা নিয়ন্ত্রণে সমস্যায় পড়েছে রাজ্য? ডব্লুবি-এমআইএফএমপি প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ১১ আগস্ট। আগামী বছর ৩০ নভেম্বর এটির সময়সীমা শেষ হচ্ছে। ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা সামগ্রিক প্রকল্প খরচ। এর মধ্যে ঋণের পরিমাণই ২ হাজার ৪০৭ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা। বরাদ্দকৃত ঋণ-অর্থের প্রাপ্য কিস্তি বকেয়া থাকায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার লক্ষ্যে রাজ্যের তরফে সমস্ত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু, রাজ্যের ন্যায্য প্রাপ্য আটকে রেখে দিয়েছে কেন্দ্র। ভবিষ্যতে তারা কী করবে, এ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।’
মন্ত্রক সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, এর মধ্যে কোনও বিতর্কের অবকাশ নেই। চুক্তি মেনেই কিস্তির টাকা পাচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি। প্রকল্পটি রূপায়িত হলে বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলি, হাওড়ার মতো জেলাগুলির মানুষ উপকৃত হবেন।