সংবাদদাতা, উলুবেড়িয়া: মঙ্গলবার বিকেলে উলুবেড়িয়া ১ নম্বর ব্লকের তপনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ফতেপুর রথতলায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও ঘটনাস্থলে কতজন ছিল, তা নিয়ে রীতিমতো ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, মঙ্গলবার যে টালির চালের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে, সেখানে চারজনের বেশি লোক ছিল। এই ঘটনায় যারা কমবেশি জখম হয়েছে, তারা সকলেই প্রথমে গা ঢাকা দিয়েছিল। পরে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত চারজন হাসপাতালে ভর্তি। পুলিসের দাবি, এই বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চারজনের যোগের কথা জানা গিয়েছে। এর বাইরে আর কেউ আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে ফতেপুর রথতলায় শেখ শামসুরের বাড়িতে বোমা বাঁধার সময় বিস্ফোরণ হলে সামসুর ছাড়াও তার ছেলে আরিফ, ভাইপো হাসান এবং স্থানীয় বাসিন্দা হালিম আহত হয়।
বুধবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, গোটা এলাকা থমথম করছে। ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিস। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে উলুবেড়িয়া থানার পুলিস ও সিভিক ভলান্টিয়াররা। একটু এগতেই দেখা গেল ভাঙাচোরা একটা বাড়ি, ভাঙা টালি, বালতি, ছেঁড়া লুঙ্গি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শামসুরের এক প্রতিবেশী মহিলা বলেন, শামসুর আগে এই টালির চালের বাড়িতে থাকলেও এখন কিছুটা দূরে একটি অন্য বাড়িতে থাকে। টালির চালের বাড়িতে গরু থাকত। প্রায়ই সেখানে অচেনা ছেলেদের আনাগোনা লেগে থাকত। মঙ্গলবার বিকেলে জরির কাজের জন্য কিছুটা দূরে জিনিসপত্র আনতে গিয়েছিলাম। সাড়ে ৩টে নাগাদ বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। তারপর দেখি, আমার বাড়ির পিছন থেকে ধোঁয়া উঠছে। দৌড়ে এসে দেখি, টালির চালের বাড়ির নীচে চাপা পড়ে রয়েছে অগ্নিদগ্ধ হালিম। কিছুটা দূরে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে আরিফ ও হাসান। তবে শামসুরকে এলাকায় দেখা যায়নি। পরে বাড়ি থেকে দূরে একটা বাঁশ বাগান থেকে অগ্নিদগ্ধ শামসুরকে উদ্ধার করা হয়।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, হালিম আগে হীরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় থাকত। ওখানেও বোমা বাঁধত সে। পরে সেখানকার লোকজন তাকে তাড়িয়ে দিলে বছর দশেক আগে এখানে চলে আসে। তাঁদের অভিযোগ, হালিম আর শামসুর দীর্ঘদিন ধরেই বোমা বাঁধে। মঙ্গলবারও তারা বোমা বানাচ্ছিল। যদিও বোমা বাঁধার অভিযোগ মানতে চাননি হালিমের স্ত্রী হাদিশা বেগম। তিনি বলেন, সকাল ১১টা নাগাদ একজন হালিমকে ফোন করেছিল। তারপর সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। বিকেলের পর আমি জানতে পারি, বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয়েছে স্বামী। হালিম কী রকম আছে, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, শুনেছি কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি।
হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিসের সুপার স্বাতী ভাঙ্গালিয়া বলেন, এখনও পর্যন্ত চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হয়েছে। তারা সবাই চিকিৎসাধীন। এই ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না, পুলিস তা তদন্ত করে দেখছে।