আন্দোলন চলবেই, জানালেন জুনিয়র ডাক্তাররা, নিশানায় বিজেপি-ও
এই সময় | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এই সময়: প্রতিশ্রুতি কি পালন করছে প্রশাসন? কর্মবিরতি আংশিক তুলে নেওয়ার পাঁচ দিনের মাথায়, বুধবার আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়ে দিলেন, সে দিকে কড়া নজর রেখেই আগামী দিনের কর্মসুচি ঠিক করবেন তাঁরা। একই সঙ্গে বুধবার আরজি কর হাসপাতালে সাংবাদিক সম্মেলন করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বিজেপিকে কড়া আক্রমণ করে তাঁরা জানিয়ে দিলেন, এই আন্দোলনকে বিজেপির ক্ষমতা দখলের সোপান হতে দেবেন না। কারণ, এটা সমাজের সব স্তরের মানুষের আন্দোলন। তাঁদের আন্দোলন যেমন চলছিল, তেমনই চলবে।জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, সরকার প্রতিশ্রুতি পালন না করলে, আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট এ দিন প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দাবি পূরণে তাঁরা সরকারের সঙ্গে অবিলম্বে আলোচনায় বসতে চান। সরকারের পদক্ষেপে তাঁরা যেমন খুশী নন, একই ভাবে সিবিআই-য়ের তদন্তের ধরণ কিংবা সুপ্রিম কোর্টের দীর্ঘসূত্রিতায় তাঁদের ক্ষোভ বাড়ছে। এই অবস্থায় আগামীকাল, শুক্রবার এসএসকেএম-এর অডিওটোরিয়ামে সংগঠনের কনভেনশন হওয়ার কথা। এর জন্য সরকারি ধনধান্য অডিটোরিয়াম এবং একটি শপিং মলের প্রেক্ষাগৃহ বুক করার পরেও তা সরকার ও মল কতৃর্পক্ষের তরফে বাতিল করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
এ দিন তাঁরা জানিয়েছেন, আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে ৯ অগস্ট যে আন্দোলন জুনিয়র ডাক্তারেরা শুরু করেছিলেন, সেই আন্দোলনে ক্রমে সমাজের সব স্তরের মানুষ যোগ দিয়েছিল বলেই প্রশাসনের কাছ থেকে দাবি আদায় সম্ভব হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি পিছিয়ে যাওয়াটা তাঁদের কাছে হতাশার। কারণ, তাঁদের এই আন্দোলন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, আইন থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভা, পুলিশ-আমলা তথা পুরো সিস্টেমের ভিতরে কতটা ঘুণ ধরেছে। ৯ অগস্ট থেকে যে দাবি তাঁরা তুলছিলেন, তা তীব্রতর না হওয়া পর্যন্ত সিবিআই একজনকেও গ্রেপ্তার করেনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি অনিকেত মাহাতো, রুমেলিকা কুমার, দেবাশিস হালদারেরা দাবি করেন, প্রমাণ লোপাটের যে অভিযোগ তাঁরা প্রথম দিন থেকে করছিলেন, সিবিআই শেষ পর্যন্ত সেই অভিযোগে সিলমোহর দিতে বাধ্য হয়েছে। তাঁদের আন্দোলনের চাপেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ডিসিপি (উত্তর), স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা, স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকী, থ্রেট সিন্ডিকেটের মাথাদের যে সব মেডিক্যাল কলেজ থেকে ছেঁটে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাও তাঁদেরই আন্দোলনের ফসল।
রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের শেষ মিটিংয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, দু-একটি বিচ্ছিন্ন উদাহরণ ছাড়া তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে তাঁরা ফের সরকারের সঙ্গে আলোচনার বসতে চেয়েছেন। এর পরেই নাম না-করে বিজেপিকে তুলোধনা করা হয়। জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি রাজ্যে ক্ষমতা দখলের ক্ষুদ্র স্বার্থে আমাদের গোড়া থেকেই এই আন্দোলনকে ব্যবহার করতে চাইছে। আমরা একটা কথা বারবার স্পষ্ট করে জানিয়েছি, হাথরস-কাঠুয়া-উন্নাওতে যারা ধর্ষকদের মালা পরিয়েছে, ক্ষমতা দখলের খেলার চক্করে আমাদের আন্দোলনকে তাঁদের ব্যবহার করতে দেব না, জনগণ দেবে না।’
তাঁদের আরও অভিযোগ, ‘এদেরই কয়েকজন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে মহালয়ার দিন জুনিয়র ডাক্তাররা নির্যাতিতার জন্য তর্পণ করবেন বলে রটিয়েছেন। এই কর্মসূচির সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।’