• সরকারি অনুদান পাওয়ায় প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়েছে পুজোর জাঁকজমক
    বর্তমান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: একসময় পুজোর খরচ জোগাড়ের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু, এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে। সৌজন্যে পুজোয় সরকারি অনুদান। প্রথমের দিকে খুব কষ্ট করে মায়ের পুজোর ব্যবস্থা করা হলেও বর্তমানে সরকারি অনুদান পাওয়ায় মল্লারপুরের প্রত্যন্ত রামভদ্রপুর গ্রামের পুজোয় বেড়েছে জাঁকজমক। 


    আগে রামভদ্রপুর গ্রামে অনুন্নয়নের ছাপ ছিল স্পষ্ট। মাটির রাস্তা, বর্ষায় এক হাঁটু কাদা হয়ে যেত। এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা‌ই দিনমজু঩রের কাজ করতেন। প্রতিমা গড়ে দুর্গাপুজো করার মতো আর্থিক অবস্থা ছিল না গ্রামবাসীদের। তাই পুজোর সময় মনমরা হয়ে থাকত শিশু-কিশোররা। নতুন জামাকাপড় পরে কাদা মাড়িয়ে দূতেত গ্রামে ঠাকুর দেখতে যেতে হতো তাদের। আবার অনেকের দূর থেকে ঢাকের আওয়াজ শুনে পুজো কাটত। এই অবস্থায় শিশু কিশোরদের মুখে হাসি ফোটাতে গ্রামবাসীরা প্রতিদিন এক মুঠো করে চাল দেবীর নামে তুলে রাখা শুরু করেন। বছর শেষে মানুষের সংগৃহীত চাল বিক্রি করে ১৮ বছর আগে দেবীর আরাধনা শুরু হয়। 


    এখন গ্রামের হাল বদলেছে। গ্রামে পাকা রাস্তা হয়েছে। এখন অবশ্য পুজোর জন্য আর বছরভর চাল সংগ্রহ করতে হয় না গ্রামবাসীদের। সরকারি আর্থিক অনুদান পরিস্থিতির বদল ঘটিয়েছে। গড়ে উঠেছে পাকা দুর্গামন্দির। এখানে মহাষষ্ঠীতে পালকি করে কলাবউ আনা হয়। এরপর নির্ঘণ্ট মেনে পুজো শুরু হয়। নবমীতে চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতি, আনন্দ উল্লাসে এখন পুজোর কয়েকদিন জমজমাট থাকে রামভদ্রপুর। 


    গ্রামের বাসিন্দা অনিল দাস, অচিন্ত্য বাগদি, কণিকা বাগদি, পঞ্চায়েত সদস্য সুনীল ফুলমালী, জ্ঞান চৌধুরী বলেন, আগে পুজোয় তেমন জাঁকজমক হতো না। এখন জেনারেটর ভাড়া করে আলোকসজ্জা, আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করে আনা হয়। একটা সময় গ্রামে পুজো দেখতে দূরবর্তী গ্রামগুলিতে যেত হতো সকলকে। সেভাবে আনন্দ হতো না। এখন পুজোর দিনগুলিতে অন্য গ্রামের লোকজন এখানে আসেন দেবী দর্শনে। রাজ্য সরকারের আর্থিক অনুদান শুধু পুজোর জাঁকজমক বাড়িয়েছে তা নয়, এই গ্রামের সম্মানও রক্ষা করে চলেছে।


    পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা বলরাম বাগদি বলেন, আগে পুজোর সময় এই গ্রাম দিয়ে কেউ আসত না। এখন উৎসবের দিনগুলিতে আশপাশের বেশকিছু গ্রামের মানুষ আসেন। এটাই আমাদের কাছে আনন্দের। আর সেটা সম্ভব হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর আর্থিক অনুদান ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য। গ্রামবাসীরাও চাঁদা দিয়েছেন। তবে সরকারের অনুদান ছাড়া পুজোর জাঁকজমক বাড়ত না। তেমনি মন্দির পাকা করতে সরকারি অনুদান অনেকটা সহায়ক হয়েছে। 


    গ্রামবাসীরা বলেন, এখন পুজোয় সরকারি অনুদান নিয়ে অনেকে নানা কথা বলছেন। কিন্তু এই অনুদান আমাদের মতো প্রত্যন্ত এলাকার পুজোগুলিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। মা দুর্গার কৃপায় গ্রামবাসীদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)