দুর্গাপুর বিধাননগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির থিম ‘ধৃতি’
বর্তমান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, দুর্গাপুর: দুর্গাপুর বিধাননগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির এবার থিম ‘ধৃতি’। তাদের মণ্ডপ সেজে উঠছে জঙ্গলের গাছগাছালির শুকনো ফুলফল ও পাতা দিয়ে। জংলি ফলের কারুকার্যের মণ্ডপসজ্জা তাক লাগাবে দর্শনার্থীদের, এমনটাই আশা পুজো উদ্যোক্তাদের। তার সঙ্গে আলোকসজ্জাতেও থাকছে অভিনবত্বের ছোঁয়া।
মণ্ডপশিল্পী ও পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, দুর্গাপুজোকে উপলক্ষ্য করে জঙ্গলমহলের মানুষের অর্থনীতি চাঙ্গা করতেই এবার এই বিশেষ থিম। দুর্গাপুর ক্লাব স্যান্টোষের পরিচালনায় এই সর্বজনীন পুজো অনুষ্ঠিত হয়। বিধাননগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও সভাপতি নিখিলেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, আমাদের পুজো এবছর ৫৪তম বর্ষে পদার্পণ করল। প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা বাজেট রয়েছে। প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে সজ্জিত মণ্ডপের উচ্চতা হবে প্রায় ৬০ ফুট। প্রস্থে প্রায় ১২০ ফুট। প্রতিমা থাকবে সাবেকি। পঞ্চমীর দিনে পুজো উদ্বোধন হবে। পুজোকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিদিনই নানা সংস্কৃতিক ও বিচিত্রানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। শেষের দিনে সনামধন্য এক সঙ্গীতশিল্পী আমাদের মঞ্চে আসছেন। প্রায় প্রতিবছরই খ্যাতনামা সঙ্গীতশিল্পী আমরা নিয়ে আসি। পুজোয় এলাকার মহিলাদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো হয়।
পুজোর সহ সম্পাদক হৃদয় সাঁই বলেন, আমাদের পুজোর একটা বিশেষত্ব হল ‘আনন্দ মেলা’। এই মেলা মূলত খাদ্যমেলা। এলাকার মহিলারা নিজেদের হাতে বানানো নানা খাবার নিয়ে মেলায় বসেন। পুজোয় বাড়ির বানানো ওই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে বহু দর্শনার্থী তথা খাদ্যারসিক মানুষ ভিড় করেন। এই ধরেনের অভিনব মেলা শহরে প্রথম আমরা সূচনা করি। এখন অবশ্য বিভিন্ন এলাকায় হচ্ছে। এছাড়াও অষ্টমী ও নবমীতে প্রায় চার হাজার এলাকাবাসীকে ভোগ খাওয়ানো হয়। এই দুর্গাপুজো হল একটা শিল্প। যা বছরে একবার হলেও সর্বস্তরের বহু মানুষের রোজগারের একটা উৎসস্থল। সর্বস্তরের মানুষের কথা ভেবেই এবার আমাদের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে। শুকনো ফলফুল ব্যবহারে জঙ্গলমহলের মানুষের অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষজন ওই সমস্ত ফলফুল ও পাতা সংগ্রহ করে রুটিরুজির একটা জায়গা করে ফেলেছে। পুজো মণ্ডপের শিল্পী দুর্গাপুরের বাসিন্দা সৌমেন চৌধুরী বলেন, মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে অর্জুন গাছের ফল, সেগুন পাতা, শালপাতা, চালতা পাতা, পদ্ম ফুলের বীজ ও চাকি, কদবেলের খোলা সহ বিভিন্ন গাছের ফলফুল। এগুলি সংগ্রহ করা হচ্ছে মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, হাওড়া সহ কলকাতা থেকে। এই সমস্ত প্রাকৃতিক উপকরণ সংগ্রহ করেন আদিবাসী সম্প্রদায় সহ প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র মানুষ। এই পুজোকে কেন্দ্র করে তাঁদেরও একটা রোজগার হয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষ টাকার প্রাকৃতিক উপকরণ কেনা হয়েছে। সমস্ত বিষয়টি একত্রিত করে থিমের নাম হয়েছে ‘ধৃতি’ অর্থাৎ যা ধারণ করে। -নিজস্ব চিত্র