অর্ণব আইচ: আর জি কর কাণ্ডের পর পুজো মণ্ডপগুলিতেও হামলার আশঙ্কা করছেন অধিকাংশ উদ্যোক্তা। তাদের আশঙ্কা, উৎসবকে কলঙ্কিত করতে পুজো মণ্ডপগুলিতে গণ্ডগোল হতে পারে। বুধবার পুজোর সমন্বয় বৈঠকে কলকাতা পুলিশের কাছে সেই আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন পুজো আয়োজকরা।
এদিন আলিপুরে ধনধান্য অডিটোরিয়ামে পুজো কমিটিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। ছিলেন অন্য পুলিশকর্তা, প্রত্যেক থানার ওসি, সিইএসসি, পুরসভা, দমকল, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারাও। সুরুচি সংঘ, চেতলা অগ্রণী-সহ একাধিক পুজো কমিটির কর্মকর্তারা এদিন বলেন, “কিছু কিছু ক্ষেত্র থেকে আমরা খবর পাচ্ছি, এই পুজোয় কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা করছে। মণ্ডপে গিয়ে তারা গণ্ডগোল করতে পারে। তাই এইসব বিশৃঙ্খলাকারীদের যেন চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের মণ্ডপে ঢুকতে না দেওয়া হয়, সেদিকে পুলিশের নজরদারি প্রয়োজন রয়েছে।” এ প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, “পুজো কমিটির আশঙ্কার কথা আমরা নোট করেছি। আমরাও বিষয়টি দেখছি। সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিয়ে রাখা হবে। আশা করছি পুজোয় কোনও গণ্ডগোল হবে না।”
পুলিশ জানিয়েছে, তৃতীয়া থেকেই পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ রাস্তায় থাকবে। ১৬ অক্টোবর লক্ষ্মীপুজো। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে। কলকাতা পুলিশের অধীনে আসার পর এই প্রথম পুজো মিটিংয়ে ডাকা হলো ভাঙড় ডিভিশনকে। এদিন ভাঙড় ডিভিশনের পুজো কমিটির সদস্যরাও বৈঠকে হাজির ছিলেন। ভাঙড় ডিভিশনের মধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১৩৬টির মত পুজো হয়। পুজোয় অগ্নি নির্বাপনের দমকলের কাছে আবেদন করেন। ভাঙড় ডিভিশনের পুজো উদ্যোক্তারা বলেন, ২৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে এই ডিভিশন। এখানে কোনও দমকল স্টেশন নেই। কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানায় এলাকায় একটি ছোট ফায়ার স্টেশন আছে। কিন্তু এতগুলি পুজোর অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সম্ভব নয়। তাই পুজোর দিনগুলোতে মণ্ডপে যেন দমকলের গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়।
দমকলের তরফ থেকে তরুণকুমার দত্ত জানান, পূজোর দিনগুলো ভাঙরে দমকলের বাড়তি গাড়ি দেওয়া হবে। এছাড়া বাকি মণ্ডপগুলিতেও অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। প্রতিটা মণ্ডপে অন্তত ২০০ লিটার জলের রিজার্ভার রাখতে হবে। এছাড়া পুজোর সময় রাস্তা অলিগলিতে আলোকসজ্জা করা হয়। অনেক সময় আগুন লাগলে ওই আলোকসজ্জার জেরে দমকলের গাড়িগুলো ঢুকতে পারে না। এতটা নিচু থাকে যে দমকলের গাড়ি সেই লাইটিংগুলোতে আটকে যায়। এদিন পুজো কমিটি গুলোকে অন্তত ১৪ ফুট উচ্চতা ছেড়ে লাইটিং-এর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয় দমকল। এছাড়া মণ্ডপে বালি, বালতি, বাঁশ বা কাঠের মুখের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।
কালীঘাট স্কাইওয়াকের কাজের জেরে এস পি মুখার্জি রোডে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং টাঙাতে পারছে না পুজো আয়োজকরা। এতে তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। স্কাইওয়াকের কাজের জন্য রাখা কন্টেনার ও আবর্জনাগুলো সরিয়ে নেওয়া হয় তার আবেদন করা হয়। পুরসভার পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, স্কাইওয়াকের কাজ প্রায় শেষের মুখে। এই মুহূর্তে কন্টেনার সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।। তবে আবর্জনা গুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করবে। পুজোর পর বিজ্ঞাপনে ভোটিং ব্যানারের আবর্জনায় ভরে ওঠে শহর। দূষণ ঠেকাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে পারে পুজা উদ্যোক্তারা প্রতিনিধি দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, পর্ষদের ওয়েবসাইটে প্লাস্টিক ওয়েস্ট প্রসেসকারী সংস্থা নাম ও নম্বর দেওয়া রয়েছে। পুজোর পর তাদেরকে আবেদন করলে তারা ওই আবর্জনাগুলি সংগ্রহ করে নিয়ে যাবে।