ভাঙা পাঁচিল দিয়ে যখন তখন হাসপাতালে ঢুকে পড়ে বহিরাগত লোকজন। ভিজিটিং আওয়ার (রোগীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়) ছাড়াও অন্য সময়ে ওয়ার্ডের মধ্যে ঢুকে পড়েন রোগীর আত্মীয়-পরিজনেরা। দীর্ঘক্ষণ ওয়ার্ডের মধ্যে বসে থাকেন। নার্স, অন্য কর্মীরা বারণ করলে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনই পরিস্থিতি ক্যানিং ২ ব্লকের মঠেরদিঘি হাসপাতালে।
দিন কয়েক আগে এক জন নার্সকে এক রোগীর আত্মীয় হুমকি দিয়ে বলেন, ‘এখানেও আর জি করের মতো ঘটনা ঘটা দরকার।’ যা শুনে রীতিমতো ভয় পেয়ে যান ওই নার্স। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে তিনি বলেন, “আগেও নানা ধরনের হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু কখনওই কর্মক্ষেত্রে এতটা অসহায় মনে হয়নি। আর জি কর-কাণ্ডের পরে লোকজন এখন ওই ধরনের ভয় দেখাচ্ছে!”
হাসপাতালে চার দিকে পাঁচিল থাকলেও দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে এক দিকের পাঁচিল ভেঙে গিয়েছে। চিকিৎসক, নার্সদের কোয়ার্টার সহ হাসপাতাল ভবনও দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় ভগ্নপ্রায়। নার্স, চিকিৎসকদের কোয়ার্টারের পাশাপাশি হাসপাতালের প্রধান ভবনের ছাদ দিয়ে জল পড়ে। হাসপাতালে বহিরাগত লোকজনের অবাধ প্রবেশের ফলে প্রায়ই নার্স ও চিকিৎসকদের কোয়ার্টারে তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। চিকিৎসক, নার্সদের কোয়ার্টার চত্বরে সিসি ক্যামেরা নেই। এই পরিস্থিতিতে অধিকাংশ নার্স, চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মীরা বাইরে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স বলেন, “এমনিতেই আমাদের হাসপাতালে যখন-তখন বহিরাগত লোকজন ঢুকে পড়ে। গ্রামীণ এলাকায় হাসপাতাল হওয়ায় রোগীর আত্মীয়-পরিজনেরাও দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালে বসে থাকেন। বারণ করলে নানা চোটপাট শুনতে হয়। প্রায়ই কোয়ার্টারের তালা ভেঙে চুরি হয়। যে কারণে রাতবিরেতে কোয়ার্টার থেকে হাসপাতালে যেতে ভয় করে।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই হাসপাতালে কোনও মহিলা চিকিৎসক না থাকলেও ৯ জন নার্স রয়েছেন। ৩ জন মহিলা সাফাই কর্মী, এএনএম, আশা ও অন্যান্য মহিলা কর্মীরা রয়েছেন। তবে আর জি কর-কাণ্ডের পরে মহিলাদের জন্য হাসপাতালে আলাদা শৌচালয়, বিশ্রাম কক্ষ করা হয়েছে বলে খবর। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে হাসপাতালে মহিলা পুলিশ কর্মী সহ অন্য পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
বিএমওএইচ হরিপদ মাঝি বলেন, “বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক সহ প্রশাসনের কর্তাদের জানানো হয়েছে।” ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকাত মোল্লার কথায়, “কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। হাসপাতালের ভবন, চিকিৎসক, নার্সদের কোয়ার্টার, পাঁচিল সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজন। বিষয়গুলি ইতিমধ্যেই আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।”