চাকরিপ্রার্থীদের এ বার নবান্ন অভিযানের ডাক শুভেন্দুর
আনন্দবাজার | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চেয়েছিল বিজেপি। এ বার পাঁচ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী নিয়ে নবান্নের দিকে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই সঙ্গে আবারও তাঁর মুখে শোনা গেল একযোগে কালীঘাট, লালবাজার ও নবান্ন অভিযানের কথা। তবে এ বার ‘ছাত্র সমাজ’ নয়, দলীয় মঞ্চ থেকে নিজের দলকেই প্রস্তাব দিলেন শুভেন্দু। একই মঞ্চে থাকলেও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য এ নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক-ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ‘কালীঘাট চলো’র ডাক দিয়েছিল বিজেপি। আদালতের অনুমতি নিয়ে হাজরা মোড়ে বুধবারের সভায় শুভেন্দু, সুকান্ত-সহ দলের সাংসদ, বিধায়ক ও পদাধিকারীরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় শুভেন্দু অভিযোগ করেন, “সিবিআই আদালতে জানিয়েছে পুলিশ প্রমাণ নষ্ট করেছে। টালা থানার ওসি গ্রেফতার হয়েছেন। আমরা প্রশ্ন করতে চাই, তা হলে পুলিশের কুকর্মের দায় নিয়ে পুলিশমন্ত্রী কেন পদত্যাগ করবেন না?” সেই সঙ্গে অবশ্য শুভেন্দু জানিয়ে দেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলেও সরকার ফেলতে চাই না। বিজেপি পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসে না! নির্বাচনে আপনাকে হারিয়ে ব্রিগেডকে গেরুয়াময় করে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে।” পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে পাঁচ বছরের মানুষ নির্বাচিত করেছেন। কার কী খেয়াল হল, তাতে তা বদলায় না!”
বিরোধী দলনেতার হুঁশিয়ারি, “আগামী ১৫ মাস আপনাকে (মুখ্যমন্ত্রী) শান্তিতে থাকতে দেব না। আমি দলকে প্রস্তাব দিচ্ছি, এক দিনে কালীঘাট, নবান্ন ও লালবাজার অভিযান হোক। দেখতে চাই পুলিশের কত ব্যারিকেড আছে, কত কন্টেনার আছে।” পাল্টা কুণাল বলেন, “অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, বিজেপির তিন জন নেতা তিন রকম বলবেন। আগে নিজেরা সেটা ঠিক করে নিন, তার পরে কর্মসূচি নেবেন।”
শুভেন্দু এ দিন বলেছেন, “আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দুই আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী এবং বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহায়তায় তাঁরা একটি পোর্টাল চালু করবেন। সেই পোর্টালে অন্তত পাঁচ লক্ষ যোগ্য কর্মপ্রার্থী আবেদন করবেন। আমি বলব, আপনারা সামনের বছরের শুরুতে হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে নবান্নের দিকে লং মার্চ করুন।’’
কলকাতার অপসারিত নগরপাল বিনীত গোয়েলের বিধানসভায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে যাওয়া নিয়ে সভা শেষে প্রশ্নের উত্তরে বিরোধী দলনেতা বলেছেন, “নির্মল ঘোষকে (পানিহাটির বিধায়ক) সিবিআই ডেকেছিল। তিনি সকালে গিয়ে যা যা কথা হয়েছে, বলে এসেছেন। তিনি যাঁর ঘরে গিয়েছিলেন, বিনীত সেই ঘরে গিয়ে সেই সব কথা শুনে এসেছেন। এখন ফোনে কথা বলার ঝুঁকি নিতে পারছেন না।” যদিও স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একেবারে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আমি ওঁকে (বিনীত) ডেকেছিলাম। কেউ কল্পনা মিশিয়ে গল্প তৈরি করলে আমার কিছু বলার থাকে না!’’
পুজোর আগে এটাই বিজেপির শেষ প্রকাশ্য কর্মসূচি জানিয়ে সুকান্ত বলেন, “পুজো পুজোর মতোই হবে। উৎসব হবে মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করলে।” সুকুমার রায়ের কবিতা উদ্ধৃত করে মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর কটাক্ষ, “তেড়ে মেরে ডান্ডা, জনগণ করে দেবে ঠাণ্ডা। সেই ভয়ে আপনারা বলা সত্ত্বেও কেউ মাঠে নামেননি।”