• মণ্ডপে গন্ডগোল হবে না তো? শঙ্কা উদ্যোক্তাদের
    আনন্দবাজার | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • দুর্গাপুজোর মণ্ডপে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে না তো? আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার আবহে বুধবার এমন আশঙ্কাই ঘুরপাক খেল পুজোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের সমন্বয় বৈঠকে। বেশ কয়েকটি পুজো কমিটির প্রতিনিধিরা সেখানে সরাসরি পুজোর দিনগুলিতে তাঁদের মণ্ডপে গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই পুলিশ যাতে কড়া পদক্ষেপ করে, সেই অনুরোধও রাখলেন তাঁরা। যা নিয়ে শেষে কলকাতার নবনিযুক্ত নগরপাল মনোজ বর্মাকেও বলতে হল, ‘‘বেশ কিছু জায়গায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করা হতে পারে বলে যে কথা উঠে এল, সেটা আমরা মাথায় রাখছি। কথা দিচ্ছি, কলকাতায় দুর্গাপুজো শান্তিপূর্ণ ভাবেই হবে।’’

    খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার বিচার চেয়ে প্রতিদিনই বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। যার প্রভাব পুজো মণ্ডপেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এই পরিস্থিতিতেই পুজোর ১৪ দিন আগে আলিপুরের ধনধান্য অডিটোরিয়ামে পুজোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক সারল কলকাতা পুলিশ। ১০টি পুলিশ ডিভিশনের প্রত্যেকটি থেকে দু’টি করে পুজো কমিটির প্রতিনিধিদের বলতে দেওয়া হয়েছে এই বৈঠকে। যার নবতম সংযোজন ভাঙড় ডিভিশন। পুলিশের কর্তারা ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন পুরসভা, বিদ্যুৎ সংস্থা সিইএসসি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং দমকলের প্রতিনিধিরা।

    সেখানেই দক্ষিণ কলকাতার সুরুচি সঙ্ঘের পুজোকর্তা স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বেশ কয়েকটি পুজো মণ্ডপকে চিহ্নিত করে সেখানে গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা হতে পারে বলে আমরা খবর পাচ্ছি। আশা করি, পুলিশের কাছেও এই খবর রয়েছে। উভয় পক্ষ মিলে কাজ করে এই সমস্যা আটকাতে হবে।’’ চেতলা অগ্রণী ক্লাবের তরফে আদিত্য দাস বলেন, ‘‘খবর আছে, মণ্ডপে ঝামেলা পাকানো হতে পারে। বিক্ষোভ হতে পারে। সকলে মিলে চেষ্টা করতে হবে, পুজোর পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয়।’’ ৪১ পল্লি পুজো কমিটির তরফে সুজিত রায় বলেন, ‘‘এ বার একটু অন্য রকম পরিস্থিতি। পুলিশ একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে তাতে পুজো সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য দিক। বাংলায় সুষ্ঠু পরিবেশ যে বজায় রয়েছে, এর মাধ্যমে বাইরের বহু মানুষের কাছে সেই বার্তা দেওয়া যাবে।’’

    বোসপুকুর শীতলা মন্দিরের উদ্যোক্তা তথা ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর কর্তা কাজল সরকারের দাবি, ‘‘একটা অন্য রকম পরিস্থিতিতে এ বার পুজো হতে চলেছে ঠিকই, তবে সমস্যা হবে না। নতুন নগরপাল এক সময়ে কলকাতায় ট্র্যাফিক বিভাগ সামলেছেন। ফলে শহরের সবটা তিনি ভালই জানেন।’’

    এরই মধ্যে কোনও কোনও পুজো কমিটি মণ্ডপ চত্বরে বাড়তি পুলিশকর্মী মোতায়েনের আর্জি জানিয়েছে। কোনও কমিটি আবার মোতায়েন থাকা মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির আর্জি জানিয়েছে। রাস্তায় জল জমে থাকার সমস্যা মেটানোর, পাড়ার বাতিস্তম্ভের আলোর জোর বাড়ানোর এবং ফুটপাত সংস্কার করার আবেদনও উঠে এসেছে। মহম্মদ আলি পার্কের তরফে মণ্ডপ পার্কে করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। রামনগর পুলিশ ক্যাম্প দুর্গোৎসব কমিটির তরফে বিচালি ঘাট সংস্কারের আবেদন জানানো হয়েছে। ভাঙড় ডিভিশনের কালিকাপুর মায়ের আশ্রম পুজো কমিটি আবার ওই ডিভিশনে বাড়তি দমকলের গাড়ি রাখার আর্জি জানিয়েছে।

    পুরসভার তরফে এক কর্তা জয়প্রকাশ সরকার দ্রুত সমস্যাগুলি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। সিইএসসি-র তরফে পুজো কমিটিগুলির জন্য ৯৮৩১০৭৯৬৬৬ এবং ৯৮৩১০৮৩৭০০, এই দু’টি টোল-ফ্রি নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে।

    দমকলের কর্তা তরুণকুমার দত্ত এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তা দেবাশিস চক্রবর্তী মনে করিয়ে দিয়েছেন, সুষ্ঠু পুজোর স্বার্থে উদ্যোক্তাদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্যগুলি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)