পুজোর মুখেই কি রান্নার জ্বালানি জোগাড় করতে সমস্যা পড়তে হবে আমজনতার একাংশকে? এই প্রশ্ন উঠছেই। কারণ, দুর্গাপুরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রলিয়াম সংস্থার বটলিং প্লান্টে ট্রাকচালকদের একাংশ লাগাতার ধর্মঘট শুরু করেছেন। তার জেরেই প্রমাদ গুনছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়, যে গৃহস্থরা ইনডেন সংস্থার গ্যাসের সংযোগ ব্যবহার করেন, সমস্যায় পড়তে পারেন তাঁরাই।
যে বটলিং প্লান্টে ট্রাকচালকদের একাংশ ধর্মঘট শুরু করেছেন, সেখান থেকে মূলত দক্ষিণবঙ্গের পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ ও হুগলি জেলায় রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়। সেক্ষেত্রে, পুজোর মুখে এই সমস্ত জেলার গ্রাহকরা সমস্যায় পড়তে পারেন।
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, দুর্গাপুরের ওই বটলিং প্লান্টে, যেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইনডেনের গ্যাস সিলিন্ডার ভরা ও সরবরাহের কাজ হয়, সেখানে গত ২০ দিন ধরে ৩৩ জন ট্রাকচালক ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। তাঁরা কেউই ট্রাক চালাচ্ছেন না। এমনকী, তাঁদের ট্রাকে বোঝাই করা পণ্যও নামাচ্ছেন না।
ট্রাক মালিকদের তরফে তাঁদেরই এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে সম্পাদিত একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে, প্রতি ৩.৬৫ কিলোমিটার রাস্তা যাওয়ার জন্য প্রত্যেকটি ট্রাককে ১ লিটার ডিজেল দেওয়া হয়।
৩৩ জন ট্রাকচালকের দাবি, এবার থেকে ৩.৫ কিলোমিটার রাস্তা যেতে প্রত্যেকটি ট্রাককে ১ লিটার তেল দিতে হবে। সেই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
ধর্মঘটী ট্রাকচালকরা বলছেন, কম পরিমাণ ডিজেল ব্যবহার করে গাড়ি চালাতে হচ্ছে তাঁদের। এর ফলে ইঞ্জিনের ক্ষতি হচ্ছে। তাতে মাসে অন্তত তিন-চারবার করে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই তেলের বরাদ্দ না বাড়ানো হলে ট্রাক চালানো সম্ভব নয়।
ট্রাকমালিকরা বলছেন, এই ধর্মঘটের ফলে তাদের বিস্তর আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। কারণ, দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যেকটি ট্রাকের জন্য প্রতিদিন গড়ে ৩,৫০০ টাকা লোকসান হচ্ছে। উপরন্তু, ট্রাকের ভিতর থাকা সিলিন্ডার না নামানোয় গ্যাস সংস্থার তরফেও ট্রাক পিছু ৮ লক্ষ টাকা করে কেটে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে।
ট্রাকমালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৩৩ জন চালক ট্রাক না চালানোর সিদ্ধান্তে অনড় থাকলেও ওই প্লান্টের বাকি ২৫০ জন চালক কাজ করছেন। ফলে আপাতত পরিষেবা বন্ধ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু, ঘাটতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা গ্যাস বুক করার অনেকটা সময় পর সিলিন্ডার পাবেন।
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুরের লেনিন সরণীর পাশে অবস্থিত এই বটলিং প্লান্ট থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ হাজার সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়। এই প্লান্ট থেকে সিলিন্ডার বোঝাই করে তা সরবরাহ করার জন্য ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই ৫ বছরের জন্য একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করা হয়েছিল।
স্থানীয় আইএনটিটিইউসি নেতৃত্বের উপস্থিতিতে ট্রাক মালিক সংগঠন ও চালক প্রতিনিধিদের মধ্যে সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই চুক্তিতেই বলা হয়েছিল, প্রত্যেকটি ট্রাককে প্রতি ৩.৬৫ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দেওয়া জন্য ১ লিটার ডিজেল দেওয়া হবে।
এই প্রেক্ষাপটে তণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের নেতারা দ্রুত সমস্যা মেটোনার আশ্বাস দিলেও বিরোধীরা খোঁচা দিতে ছাড়ছে না। তাদের বক্তব্য, তোলাবাজি, কাটমানি ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলেই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের।