• জিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পথ আবিষ্কারের নজির পুরুলিয়ার সোমনাথের
    বর্তমান | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • পিনাকী ধোলে, পুরুলিয়া: ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল বিজ্ঞানী হওয়ার। কিন্তু মাধ্যমিকে মাত্র ৫৪ শতাংশ নম্বর পাওয়ায় বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তিই নিতে চাইছিল না কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ। পুরুলিয়ার সেই যুবক জিকা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে এমন মাইক্রো আরএনএ (এমআইআরএনএ) আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গোটা বিশ্বকে। মাত্র ২৬ বছর বয়সী পুরুলিয়ার পুঞ্চার যুবক সোমনাথ দত্তর এই আবিষ্কারে গর্বিত গোটা দেশ। সম্প্রতি জার্মানির বিশ্ববিখ্যাত ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিউটে বিজ্ঞান সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, এমআইটি সহ নানা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতি বছর তাঁদের সামনে মাত্র ৩ জন গবেষক পড়ুয়া নিজেদের আবিষ্কারকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার সুযোগ পান। একমাত্র ভারতীয় হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন সোমনাথ। 


    সোমনাথের বাবা কর্ণলাল দত্ত একজন এলআইসি এজেন্ট। মা পূর্ণিমাদেবী গৃহবধূ। তাঁরা জানিয়েছেন, ও যে ছেলেবেলা থেকেই প্রচণ্ড মেধাবী ছিল, এমনটা নয়। শুধুমাত্র নিজের কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের দৌলতে সাফল্য ছিনিয়ে এনেছে। সোমনাথের স্কুলের শিক্ষকরাও একই কথা বলছেন। ২০১৫ সালে পুঞ্চার লৌলাড়া রাধাচরণ অ্যাকাডেমি থেকে মাত্র ৫৪.৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাস করেন সোমনাথ। এত কম নম্বরে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে স্কুল। পরে তাঁর বাবার অনুরোধে ভর্তি নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। ভালো নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে পাঁশকুড়া বনামালি অ্যাকাডেমিতে বায়োটেকনলজি নিয়ে ভর্তি হন সোমনাথ। সেখান থেকে পুদুচেরি সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে বায়ো ইনফরমেটিক্সে মাস্টার্স, তারপর পিএইচডির জন্য ডাক আসে দক্ষিণ কোরিয়ার পুসান ন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে। পুসানে পড়াকালীনই মার্কিন মুলুকের ন্যাশনাল ইনস্টিটিটিউট অফ হেলথেও যৌথভাবে গবেষণার কাজ চালিয়ে গিয়েছেন সোমনাথ। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফোনে সোমনাথ বলেন, ‘৮৯টি দেশে এই জিকা ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত। ভারতের কর্ণাটক, মহারাষ্ট্রেও জিকার ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে। মূলত মশার মাধ্যমেই তা একজন থেকে অন্যজনের শরীরে বাহিত হয়। একবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পক্ষাঘাত পর্যন্ত হতে পারে। প্রসূতি মহিলার শরীরে যদি একবার এই ভাইরাস প্রবেশ করে, তাহলে ‘গুলেন বারি সিনড্রোম’-এর মতো বিরল স্নায়বিক সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে শিশু। অপরিণত মস্তিস্ক, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা হারিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এর কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। সোমনাথের গবেষণার উপর ভিত্তি করে প্রতিষেধক আবিষ্কার হলে উপকৃত হবে লক্ষ লক্ষ মানুষ।
  • Link to this news (বর্তমান)