• চাহিদা নেই তবলার, ঢাক তৈরি হচ্ছে ফাইবার দিয়ে, হতাশা রুইদাসপাড়ায়
    বর্তমান | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রূপনারায়ণপুর (সালানপুর): সালানপুর ব্লকের রূপনারায়ণপুরের রুইদাসপাড়া ছিল একটা সময়ে বাদ্যযন্ত্র ক্রয় বিক্রয়ের হাট। তবলা থেকে খোল, ঢাক থেকে ঝুমুরের নানা ভালোমানের বাদ্যযন্ত্র বানানোতে খ্যাতি ছিল এখানকার শিল্পীদের। খুচরো বিক্রেতা থেকে ঢাকি, শিল্পীদের ভিড় লেগেই থাকত। পুজোর সময়ে তিল ধারণের জায়গা থাকত না। এবার পুজো আগে সেখানেই শ্মশানের নীরবতা। তাঁদের আক্ষেপ, বাড়িতে বাড়িতে আগে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান শেখা, তবলা বাজানোর রেওয়াজ ছিল। এখন খুদেদের কাঁধে তুলে দেওয়া হচ্ছে বিদেশি গিটার। ডুগি, তবলার বাজার শেষ। আগে কাঠের ঢাক তৈরি হতো। এখন অ্যালুমিনিয়াম, ফাইবারের ঢাকের খোল পাওয়া যায়। ঢাকিরাও আর এমুখো হয় না। বাধ্য হয়েই শিল্পীরা হয়েছে দিনমজুর। সরকারি সাহায্য পেয়েছেন কিনা প্রশ্ন শুনলেই খেপে ওঠেন তাঁরা। 


    রূপনারায়ণপুর সালানপুর ব্লকের সবচেয়ে বড় জনপদ। এখানেই র঩য়েছে ব্লক অফিস সহ নানা সরকারি অফিস। সরকারি, বেসরকারি স্কুল, আইটিআই পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চার বিষয়ে এই এলাকার খ্যাতি ছিল। সাহিত্য রচনা কাব্যচর্চার পাশাপাশি গান বাজনার চর্চাও চলত জোরকদমে। রূপনারায়ণপুর সামডি রোডর উপর রু‌‌ইদাসপাড়ায় তৈরি হতো তবলা, খোল, ঢাক ইত্যাদি। পুজোর সময়ে ঢাকের চাহিদা তুঙ্গে উঠত। এই সময়ে তাঁদের নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকত না। এখন সবই অতিত। তাঁদের দোকানের সামনে দাঁড়াতেই ক্রেতা ভেবে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এলেন। ক্রেতা নয় জানা মাত্র একরাশ বিরক্তি। আক্ষেপের সুরে তাঁদের দাবি, আমাদের জন্য কেউ কিছু করল না। আর কেউ করবেও না। পরে জানা গেল প্রকৃত সমস্যা। তাঁরা বলেন, তবলা হারমোনিয়াম ছেড়ে এখন মফস্সলের ছেলেমেয়েরাও গিটার বাজিয়ে গান করছে। রবীন্দ্র নজরুলের সংস্কৃতি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। ডুগি তবলার বিক্রিই আর নেই। অরুণ রুইদাস বলেন, ৪৫ বছর ধরে এই ব্য‌বসার সঙ্গে যুক্ত। এখন একটি কাঠের ঢাক কিনতে গেলে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। ঢাকি তিনদিন পুজোয় ঢাক বাজিয়ে তিন হাজার টাকা পাবে। কেন এই ঢাক কিনবে! তিনি বলেন, লক ডাউনের সময়ে আমার কাছে ৬০টি ঢাক ছিল। এখনও সব ঢাক বিক্রি হয়নি। একই ভাবে বিনোদ রুইদাসও আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। পরিবারের অনেক সদস্যই ঩দিনমজুরের কাজে যান। বাদ্যযন্ত্র শিল্পী, যাঁরা স্থানীয় সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তাঁরা কোনও সরকারি অনুদান পায়নি? প্রশ্ন শুনে মেজাজ হারালেন অনেকে। তাঁরা বলেন, সবাই খবর নিতে এসে প্রতিশ্রুতি দেয়, কাজ কিছু হয় না। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক আজিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি বর্তমানে জিএম ডিআ‌ই঩সির অধীনে রয়েছে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)