সংবাদদাতা, বোলপুর: কলকাতার আহিরিটোলা যুবক সঙ্ঘের পুজোয় এবারের থিম আলপনা। আর সেই আলপনার কারিগর শান্তিনিকেতনের বিশিষ্ট শিল্পী অধ্যাপক সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়।
বাঙালির হারিয়ে যেতে বসা অনেক ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম হল আলপনা। লক্ষ্মীপুজো, সরস্বতী পুজোয় বাড়ির মহিলারা মেঝে ভরিয়ে তুলতেন সুন্দর আলপনায়। শুধু পুজোতেই নয়, বাড়ির বিভিন্ন মঙ্গল অনুষ্ঠানেরও একটা সময় পর্যন্ত আলপনা দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। বিয়ের সময়ে পিঁড়িতে ও ছাদনতলা সাজিয়ে তোলা হতো সুন্দর সুন্দর আলপনায়। কিন্তু দিনকে দিন ক্ষইতে ক্ষইতে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে আলপনা।
এখন চালগুড়ো কিংবা এলামাটির পরিবর্তে ইন্টারনেট থেকে ডিজাইন ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে মেঝেতে সেঁটে দেওয়া হচ্ছে আলপনার স্টিকার। তবে, শান্তিনিকেতনে এখনও ঐতিহ্যবাহী আলপনার কদর রয়েছে। শান্তিনিকেতনের প্রথম যুগে আচার্য নন্দলাল বসু সহ অন্যান্য দিকপাল শিল্পীরা আলপনাকে শিল্প হিসেবে যে গুরুত্ব দিয়েছিলেন তা বর্তমানে যে ক’জন টিকিয়ে রেখেছেন তার মধ্যে অন্যতম শিক্ষাসত্রের প্রাক্তন অধ্যাপক শিল্পী সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়। আহিরিটোলা যুবক সঙ্ঘের প্রতিমা ও মণ্ডপসজ্জার গুরুদায়িত্ব সুধীরঞ্জনবাবুর কাঁধে। হ্যান্ডমেড পেপার দিয়ে দুর্গা প্রতিমার সজ্জার কাজ প্রায় শেষ। এবার পালা সাজানোর, সেই কাজেই তিনি পাড়ি দিয়েছেন কলকাতায়। শান্তিনিকেতন ঘরানার আলপনা মণ্ডপে তুলে ধরা হবে। বেশ কয়েক বছর হল বিশ্বভারতীর শিক্ষাসত্র থেকে অবসর নিয়েছেন সুধীরঞ্জনবাবু। তাঁর লক্ষ্য, আগামী প্রজন্মকে শান্তিনিকেতন ঘরানার আলপনা শেখানোর কাজে উদ্বুদ্ধ করা। সেজন্য শিল্প ও সৃষ্টির মধ্যে এখনও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। কাজ জনপ্রিয় হওয়ার কারণে দেশ-বিদেশে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগেও কলকাতার পুজোয় মণ্ডপসজ্জার দায়িত্ব পালন করেছেন। এ বছর তাঁকে পেতে এক বছর আগে থেকে যোগাযোগ করেছিল আহিরিটোলার পুজোর আয়োজকরা। এ বছর তাদের থিম ‘আকারের মহাযাত্রা’। নিজের কাজের প্রসঙ্গে সুধীরঞ্জনবাবু বলেন, আলপনা ও পটের বৈশিষ্ট্যকে ভিত্তি করে মণ্ডপসজ্জা হবে। শিল্পী হিসেবে সব সময়েই চাই বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ুক। কলকাতার মতো মেগা সিটিতে শান্তিনিকেতনের ঘরানার আলপনা দুর্গাপুজোর থিম হওয়া মানে সারা দেশে নানা প্রান্তের মানুষ বিষয়টি জানতে পারবেন। এটাও বেশ গর্বের। তবে এই কৃতিত্ব আমার একার নয়। আমার আলপনায় আঁকা মা দুর্গাকে মৃন্ময়ী রূপ দিয়েছেন মৃৎশিল্পী নবকুমার পাল। এছাড়া, আলপনা এনলার্জ করে রড, বাঁশ সহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়েছেন আরেক শিল্পী দেবজ্যোতি জানা। • নিজস্ব চিত্র