শ্রীকান্ত পড়্যা, পাঁশকুড়া: ২০ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। কংসাবতী নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ অংশ। কংসাবতী নদী তীরবর্তী চৈতন্যপুর-২গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজয়রামচক গ্রামের নাজরানা বিবি প্রসব যন্ত্রণায় কাতর। স্বামী শেখ মেহেবুব কর্মসূত্রে মধ্যপ্রদেশে থাকেন। সন্তানসম্ভবা পুত্রবধূকে নিয়ে কী করবেন, তা ভেবে শ্বশুর-শাশুড়ি তখন দিশেহারা অবস্থা। কারণ কংসাবতীর উপর ডোমঘাটে বাঁশের সাঁকো বিজয়রামচক গ্রামের মানুষজন শহরে আসা যাওয়া করেন, সেটি ভেসে গিয়েছে দু’দিন আগেই। পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে খবর দেওয়ার পর মাতৃযান এলেও বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। বাড়ি থেকে আসন্নপ্রসবাকে কীভাবে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হবে, তা নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েন চলে। ঘটনাস্থলে পঞ্চায়েত প্রধান পৌঁছান। শেষমেশ দোলনায় বসিয়ে সাবধানে বাড়ি থেকে অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সোজা হাসপাতাল। সেখানে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন নাজরানা। আজ, শুক্রবার শেখ মেহেবুব মধ্যপ্রদেশ থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবেন।
পাঁশকুড়ায় বন্যা পরিস্থিতি থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি পাওয়ার আগেই ফের বন্যার ভ্রুকুটি। নিম্নচাপের জেরে ভারী বৃষ্টিতে নিউ কংসাবতীতে জলস্তর বিপদসীমা পার করেছে। গড়পুরুষোত্তমপুরে ভাঙা নদীবাঁধ দিয়ে জল ঢুকছে পাঁশকুড়া শহরে। গোবিন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মানুরে ভাঙা কংসাবতী নদীবাঁধ মেরামতের জন্য এনডিআরএফ নামানো হয়েছে। এই অবস্থায় আবারও বিপর্যয়ের আশঙ্কায় সতর্ক স্বাস্থ্যদপ্তর। মোট ন’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সতর্কতা জারি হয়। ওই ন’টি পঞ্চায়েত এলাকায় আসন্নপ্রসবাদের নিরাপদ জায়গায় সরানো হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে যাঁদের ডেলিভারি হবে তাঁদের পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, পাতন্দা এবং পূর্ব ইটারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওই দুই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়। পাঁশকুড়ার ন’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার আশাকর্মীরা এলাকায় ঘুরে সন্তান সম্ভবা মায়েদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। ডেলিভারির সম্ভাব্য সময় তাঁদের কাছে থাকে। সেটিতে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন আশাকর্মীরা। তারপর প্লাবিত এলাকায় গর্ভবতী মায়েদের নিরাপদ জায়গায় সরানো হচ্ছে। অনেকেই আত্মীয় বাড়িতে যাচ্ছেন। প্লাবন পরিস্থিতিতে শারীরিক অসুবিধা হলে সন্তানসম্ভবা মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া জল দ্রুত বের করার জন্য পাঁশকুড়ার গোটপোতায় ঢালাই রাস্তা কেটে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গোটপোতা গ্রামের মানুষজনের সমস্যা হচ্ছে।
বিজয়রামচক গ্রামের নাজরানা বিবির মতো যাতে জলবন্দি অবস্থায় প্রসব বেদনায় বাড়িতে কাতরাতে না হয়, সেজন্য আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মোট ন’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার উপর এই বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আশাকর্মীরা সতর্ক আছেন। ব্লক স্বাস্থ্যদপ্তর প্রতিনিয়ত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আসন্ন প্রসবাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে রাখছে। যাঁদের ডেলিভারি দেরি আছে, তাঁদের আত্মীয় বাড়িতে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেইমতো অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়েছেন। কিন্তু, যাঁদের ডেলিভারি শীঘ্রই তাঁদের হাসপাতালে রাখা হচ্ছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায় বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আমাদের কিছু আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়। না হলে বন্যার সময় সব জায়গায় যোগাযোগ রাখা সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়। পাঁশকুড়ায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছিল। তারপর আবারও দুর্যোগ পরিস্থিতি। আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। পাঁশকুড়া এখনও জলমগ্ন।