• টানা বৃষ্টির জের, শাক-সব্জি কিনতেই পকেট ফাঁকা, নাভিশ্বাস আম-জনতার
    বর্তমান | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • অভিষেক পাল, বহরমপুর: লাল শাকের কেজি ৬০ টাকা! পুঁইশাকও তারই পাশপাশে! তাও আবার গ্রামের বাজারে। ফলে, মাছ-ভাত তো দূরের কথা, শাকে-ভাতে থাকতে গিয়েও নাভিশ্বাস উঠছে আম-জনতার। শাকের এই দর দেখলেই বোঝা যায়, বাজারের অন্যান্য সব্জির দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে! 


    বহরমপুরের অধিকাংশ বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। বিনস ২০০ টাকা। বরবটি ১০০ টাকা। বাঁধাকপি ৬০ টাকা ও ওলের দাম ৮০ টাকা। বর্ষাকালের অতি পরিচিত সব্জি ঝিঙে, পটল ও ঢেঁড়সের দামও সাধারণের নাগালের বাইরে। ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। ঝিঙে এখন ৮০ টাকা কেজি, পটলের দাম ৪০ টাকা। ক্যাপসিকাম ২০০ টাকা কেজি। পাতি লেবু পাঁচ টাকা পিস। মুর্শিদাবাদে বন্যা পরিস্থিতিতে সব থেকে ক্ষতি হয়েছে সব্জির ক্ষেত। এদিকে বৃষ্টির জল, অপরদিকে বাঁধ ভেঙে ঢোকা নদীর জলে সব্জি ও ধান চাষের জমি জলমগ্ন। তার জেরেই ক্রমশ চড়া হচ্ছে বাজার। 


    পুজোর আগে এই লাগাম ছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মধ্যবিত্তের মাথায় হাত। নির্ধারিত মাস মাইনেতে সংসার চালানোই এখন চ্যালেঞ্জ। ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে একটা ছোট থলিও ভরছে না। গিন্নির ফর্দ কাটছাঁট করেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না কোনওভাবেই। শাক কিনতে গিয়ে চারাপোনার দাম কুলোচ্ছে না। এতে যে শুধু ক্রেতারাই বিপাকে পড়ছেন, এমনটা নয়। বাজারে বিক্রেতাদেরও ব্যাজার মুখ। নিত্যদিনের কাস্টমারের সঙ্গেও তাঁদের খটমট লেগে যাচ্ছে। কেন এত দাম? উত্তর দিতে হিমশিম অবস্থা তাঁদের।  


    কল্পনা হাউজ মোড়ের বাজারের সব্জি বিক্রেতা হাফিজুল শেখ বুধবার বলছিলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে আমরা কম দামে সব্জি কিনতে পারছি না। তা হলে আমরা কি করে দেব বলুন তো। সব্জির দামের থেকে এখন বেশি দাম শাকের। পাইকারি বাজার থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে লাল শাক ও পুঁইশাক কিনে এনে খুচরো সব বিক্রি করতেও পারছি না। অনেক সময় এই বৃষ্টির কারণে সব্জিতে পচন ধরছে। কেনা দামে তখন বিক্রি করে দিচ্ছি।’ 


    স্বর্ণময়ী বাজারে আনাজ কিনতে এসে ক্রেতা বিপ্লব মজুমদার বলছিলেন, ‘মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। যে হারে সব্জির দাম বাড়ছে, এরপর শুধু সেদ্ধ ভাত খেতে হবে। এত দাম দিয়ে শাক সব্জি কেনার মত অবস্থা আমাদের নেই।’ সব্জি বিক্রেতা আনসার আলির কথায়, ‘আগে সাধারণ মানুষ যে পরিমাণ শাক-সব্জি কিনত, এখন অনেক কমে গিয়েছে। সুতরাং, আমাদেরকেও অনেক কম শাক সব্জি কিনতে হচ্ছে। পাইকারি বাজার থেকে সব্জি কিনে এনে সেগুলি দুই তিন দিন ধরে বিক্রি করে খুব একটা লাভ হয় না।’


    কান্দি বাসস্ট্যান্ড মোড়ে বাজার করতে এসে নীলিমা মুখোপাধ্যায়ের তো ভিড়মি খাওয়ার জোগাড়! বলছিলেন, ‘শাকের এত দাম! কি খেয়ে বাঁচবে সাধারণ মানুষ? তবে এখন যেভাবে আনাজপাতির দাম বেড়েছে তার তুলনায় মাছ-মাংস খাওয়াই বোধহয় বেশি ভালো।’ খাগড়ার নতুন বাজারের পাইকারি এক সব্জি বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা চাষিদের থেকে সব্জি কিনে এনে সরাসরি তা বিক্রি করছি। এই বৃষ্টি এবং বন্যা পরিস্থিতির জেরে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তাই দাম বেশি।’
  • Link to this news (বর্তমান)