সবুজে-সান্নিধ্যে ময়ূরের পেখম তুলে নৃত্য পুজোয় আমন্ত্রণ অরণ্যসুন্দরী আউশগ্রামের
বর্তমান | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, আউশগ্রাম: শরতের সকালে গাছের পাতার ডগায় লেগে রয়েছে শিশিরের ফোঁটা। সূর্যের প্রথম আলো ঝরে পড়ছে সবুজ পাতায়। হালকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হওয়ায় গাছের পাতাগুলি যেন একটু বেশি সবুজ হয়ে উঠেছে। কোনও কোলাহল নেই। মাঝেমধ্যে ভেসে আসছে নাম না জানা পোকার ডাক। ঘন জঙ্গলের বুক চিরে কালো পিচের রাস্তা চলে গিয়েছে। বেলা গড়াতেই হাজির ইউটিউবাররা। বিভিন্ন পোজে তাঁরা ছবি তুলছেন। মসৃণ রাস্তা ধরে কয়েক কিলোমিটার গাড়ি চালালে দেখা মিলবে ময়ূরের। কপাল ভালো থাকলে পেখম তুলে নৃত্যও দেখা যাবে। পুজোর দিনগুলিতে একটু অন্যরকমভাবে সময় কাটাতে হলে আসতেই হবে পূর্ব বর্ধমানের অরণ্যসুন্দরী আউশগ্রামে। শারদ উৎসবে স্বাগত জানাতে অর্ঘ্য সাজিয়ে তৈরি রয়েছে অরণ্য সুন্দরী।
গুসকরা স্টেশন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই রয়েছে জঙ্গল। খুব সহজেই এখান থেকে পৌঁছনো যাবে ভাল্কি মাচানে। সেখান থেকে ১৫কিলোমিটার দূরে রয়েছে হেদোগোড়া। সেখানে দেখা মিলবে ময়ূরের। স্থানীয়রা বলেন, কলকাতা থেকে সকালে রওনা হয়ে খুব সহজেই এখানে আসা যায়। আবার দিনের শেষে গন্তব্যে ফেরা যায়। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, আউশগ্রামের জঙ্গল জেলার সম্পদ। পর্যটকদের আসার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। পর্যটন দপ্তর ভিডিওর মাধ্যমে ওয়েবসাইটে এখানকার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলবে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, আউশগ্রামে একাধিক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এখানেই দ্বারিয়াপুর গ্রাম রয়েছে। সেখানকার ডোকরা শিল্প দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিভিন্ন ধরনের কারুকার্য চাক্ষুষ করতে হলে এই গ্রামে ঢুঁ মারা যেতেই পারে। আগামী দিনে সার্কিট ট্যুরিজম তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
আউশগ্রামের পাশপাশি জেলার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলি পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানো যায় কিনা তা নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটনের তালিকায় বর্ধমানের ১০৮ শিবমন্দির, সর্বমঙ্গলা মন্দির, কালনার ১০৮ শিব মন্দির সহ একাধিক জায়গা আনা হবে। তবে শহুরে পরিবেশ ছেড়ে উৎসবের মরশুমে নির্জনে সময় কাটাতে হলে আউশগ্রামে আসতেই হবে। ভাল্কি জঙ্গলে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল চূরকা হেমব্রম, ভীম হেমব্রমদের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, এখন জঙ্গলে অনেকেই ঘুরতে আসেন। পুজোর দিনগুলিতেও পর্যটকরা আসেন। বোলপুর ঘুরতে এসে এখানে ঢুঁ মেরে যান। নিজেদের গাড়ি থাকলে এখানে আসা সহজ হয়।
স্থানীয়রা বলেন, দিনের প্রতিটি সময় এই জঙ্গলের রূপ বদলে যেতে থাকে। সকালে সবুজ পাতায় যেমন স্নিগ্ধ শিশিরবিন্দুর দেখা মেলে তেমনই সন্ধ্যা নামার আগের রবির কিরণে জঙ্গল রঙিন হয়ে ওঠে। আঁধার নামলে জঙ্গলজুড়ে পিন ফেলার নিস্তদ্ধতা। কয়েক ঘণ্টা কাটাতে পারলেই যেন সমস্ত স্ট্রেস উবে যায়।