• ঢাকের সংখ্যা বাড়লেও ফাইবারের দাপটে কমছে মেরামতির কাজ চিন্তিত ঢাকমিস্ত্রিরা
    বর্তমান | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নির্মাল্য সেনগুপ্ত, রায়গঞ্জ: আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঢাকিদের সুবিধা হলেও বিপদ দেখছেন রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগরের ঢাকমিস্ত্রিরা। সামনেই বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো। সাজছে মণ্ডপ। দোকানে দোকানে কেনাকাটার ধুম। দু’হাত ভরে বাজার করে হাসিমুখে ফিরছে আমজনতা। কিন্তু সেভাবে খুশিতে সামিল হতে পারছেন না দেবীনগরের ঢাক মেরামতকারী ধনঞ্জয় বাদ্যকর, রাজু বাদ্যকররা। 


    বাড়তি রোজগারের আশায় বছরভর দুর্গা ও কালীপুজোর আগে ক’টা দিনের অপেক্ষায় থাকেন ঢাকমিস্ত্রিরা। কারণ উৎসব উপলক্ষ্যে বাজানোর ডাক পেলেই ঢাকের টুকিটাকি মেরামত করাতে ভিড় বাড়ে মিস্ত্রিদের কাছে। কিন্তু দিন দিন সেই কাজ করাতে আসা ঢাকির সংখ্যা কমছে। 


    ধনঞ্জয়, রাজুদের কথায়, দিনদিন ঢাক মেরামতের প্রয়োজন কমছে। কয়েক বছর অন্যান্য সব কিছুর মতো আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে ঢাকেও। ঢাকের খোল তৈরি হচ্ছে টিন, ফাইবার দিয়ে। ওজনে হালকা ওই ঢাকে পশুর চামড়ার বদলে ব্যবহার হচ্ছে নাইলন বা রেক্সিন। নতুন ধরনের ঢাকগুলির ক্ষেত্রে ঢাকিরাই টুকটাক মেরামত করে নিতে পারেন। বিশেষ কিছু করার প্রয়োজনও পড়ে না। সেজন্য ঢাকমিস্ত্রিদের কাজ অনেক কমেছে। আগের কাঠের খোল ও চামড়ায় আবৃত ঢাকের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব ছিল না। তখন দক্ষ কারিগরের কাছে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।


    ধনঞ্জয় বললেন, আমরা ৩০ বছর ধরে ঢাক সারাই করি। কয়েক বছর আগেও মেরামতির জন্য লাইন পড়ত। কারণ দীর্ঘদিন কাঠের ঢাক ব্যবহার না হলে সেটি নরম হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কাঠের খোলে আবৃত পশুর চামড়া সমান করার প্রয়োজন  হয়। অনেক সময় চামড়ার চাদর, বেল্ট বদলাতে হয়। কিন্তু নতুন ঢাকে এসবের প্রয়োজন হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে পুরনো ঢাক যাঁদের আছে, তাঁরাই একমাত্র মেরামত করান।  পুজোর আগে অন্তত শ’দুয়েক ঢাকি আসত। এখন মেরেকেটে ৩০ জনও কাজ করান কি না সন্দেহ। পূর্বপুরুষের পেশা বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ঢাক ছাড়াও খোল, তবলা, ডুগি, নাল, ঢোল, মাদল, ডোমরু মেরামত করেন বলে এখনও এই পেশায় টিকে আছেন ঢাকমিস্ত্রিরা। নাহলে পেশা অনেক আগেই ছাড়তে হতো বলে জানিয়েছেন তাঁরা।  ঢাক মেরামত চলছে রায়গঞ্জের দেবীনগরে।-নিজস্ব চিত্র 
  • Link to this news (বর্তমান)