• তিলজলায় শিশু ধর্ষণ-খুনে ফাঁসির সাজা
    বর্তমান | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘হুজুর, আপনার কাছে আমাদের একটাই আর্জি... আসামির যেন ফাঁসির সাজা হয়।’ এতটুকুই বলতে পেরেছিলেন নিহত শিশুর মা। চোখের জল আর ধরে রাখতে পারেননি। কাঁদছিলেন মেয়েহারা বাবাও। আলিপুরের ‘বিশেষ’ পকসো আদালতের বিচারক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য দেরি করেনি। আসামি পক্ষের আইনজীবীদের যাবতীয় আপত্তি উড়িয়ে ফাঁসির সাজা দিয়েছেন তিলজলায় শিশুকে ধর্ষণ-খুন মামলায় দোষী সাব্যস্ত অলোককুমার সাউকে। রায়দানের এক মাসের মধ্যে মৃত শিশুকন্যার মাকে ১০ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়ার জন্য লিগাল এইডকে নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি অন্যান্য অভিযোগে দোষী সাব্যস্তের পৃথক সাজা ঘোষণা হয়। রায় ঘোষণার সময় বিচারক সুদীপ্ত ভট্টচার্য বলেন, ‘এই অপরাধ শুধুমাত্র বিরল নয়। বলা যেতে পারে, বিরল থেকে বিরলতম। ঘটনার নৃশংসতা ভাবলে শিহরিত হতে হয়। পুরো কাজটি করেছেন ঠান্ডা মাথায়। আপনাকে সহানুভূতি দেখালে তা সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক হবে। সমাজে একটা আলাদা বার্তা যাবে। তাই ঘটনার ভয়াবহতা খতিয়ে দেখে আপনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল।’


    গত বছর ২৬ মার্চ ছ’বছরের একরত্তি শিশুটি আবাসনের সিঁড়ি দিয়ে নামছিল। তখনই অলোককুমার সাউ তাকে তুলে নিয়ে যায়। নৃশংস ধর্ষণের পর চিৎকার থামাতে মাথায় হাতুড়ি মারে এবং গলা টিপে তাকে খুন করে অলোক। পুলিস এবং লালবাজারের গোয়েন্দারা তার ফ্ল্যাটে রান্নাঘরে গ্যাস সিলিন্ডারের পিছন থেকে উদ্ধার করেছিল শিশুর বস্তাবন্দি দেহটি। এই ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল তিলজলা থানা এলাকা। কলকাতা পুলিস দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে। সে কথা অবশ্য বৃহস্পতিবার উল্লেখ করেছেন বিচারকও। দ্রুত চার্জশিট পেশের জন্যই যে ১৮ মাসের মধ্যে সাজা ঘোষণা সম্ভব হল, সে কথাও বলেন তিনি।


    এদিন সকালে থেকেই এই রায় শুনতে আলিপুর জজ কোর্ট চত্বরে বহু মানুষ ভিড় জমান। কোর্ট চত্বরে ছিল কড়া পুলিসি প্রহরা। ভিড় ছিল আইনজীবীদেরও। ফাঁসির সাজা শুনেও অবশ্য হেলদোল দেখা যায়নি ওই যুবকের মধ্যে। সকালে শুধু সে জানিয়েছিল, ‘আমি অতীতে কোনও অপরাধ করিনি। কোনও সাজার নজিরও নেই। তাই আমাকে যেন কম সাজা দেওয়া হয়।’ এর তীব্র বিরোধিতা করে দুই সরকারি কৌঁসুলি শিবনাথ অধিকারী ও মাধবী ঘোষ বলেন, ‘যে অপরাধ অলোককুমার সাউ করেছে, তাতে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনও শাস্তি আশাই করা যায় না। আমরা চাই, এই সাজা যেন একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।’ এরপরই বিচারক তাঁর সাজার কথা ঘোষণা করেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)