সরকারি চাকরি করে, সরকারি দপ্তরকেই 'ঘোল' খাইয়ে ছেড়েছিলেন আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ! এমনই দাবি করছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, হাসপাতালের যে সমস্ত কাজ রাজ্যের পূর্ত দপ্তরের করার কথা, কারসাজি করে সেই ওয়ার্ক-ওর্ডার সন্দীপ নিজের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের পাইয়ে দিতেন। অভিযোগ, তার জন্য ঘুর পথে সেই ঠিকাদারদের থেকে টাকার ভাগ পেতেন তিনি।সরকারি হাসপাতালের বিল্ডিং পরিকাঠামো থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্ক-এর কোনও প্রয়োজনে তা পূর্ত দপ্তরেরই করার কথা। কোথায়, কী ধরনের কাজ হবে, তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে প্রথমে পূর্ত দপ্তরকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা খরচের হিসাব ঠিক করেন। এর পরই সরকারি নিয়ম মেনে কাজ শুরু হয়। আরজি কর হাসপাতালের ক্ষেত্রে সেই নিয়মের 'ব্যতিক্রম' ঘটেছিল বলে মনে করছে সিবিআই।
গত তিন বছরে আরজি করের বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে শৌচালয়, বিল্ডিং মেরামতির কাজ হয়েছে। নতুন ঘরও তৈরি হয়েছে রোগীদের জন্য। ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্ক হয়েছে হাসপাতাল চত্বরে। অভিযোগ, বিপুল টাকার ওই কাজগুলি পূর্ত দপ্তরের অধীনে পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। পরিবর্তে এক লক্ষ টাকার কম অঙ্কের ছোট ছোট কাজে তা ভাগ করে ওয়ার্ক ওর্ডার পাশ করানো হয়েছিল ধাপে ধাপে। তদন্তকারীদের দাবি, ক্ষমতাবলে সন্দীপ সেই কাজের বরাত তুলে দিয়েছেন ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের হাতে।
আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত নেমে টেন্ডার সংক্রান্ত বেশ কিছু নথিপত্র কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। সম্প্রতি, ওই হাসপাতালের তিনটি আলমারি থেকে বিপুল নথি বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারীরা। সন্দীপ এবং তাঁর আত্মীয়দের বাড়ি থেকেও দিস্তা দিস্তা নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওই সব নথি খতিয়ে দেখার পরেই, পূর্ত দপ্তরকে এড়িয়ে বাইরের ঠিকাদারদের কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল বলে জানতে পেরেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
এই প্রসঙ্গে সন্দীপ ঘনিষ্ঠ ভেন্ডার সুমন হাজরা, বিপ্লব সিংহ এবং প্রাক্তন বডিগার্ড আফসার খানের নামও উঠে এসেছে। এই তিনজন ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। কয়েকটি কাগুজে সংস্থাও খোলা হয়েছিল বলে অভিযোগ। যা আসলে নিয়ন্ত্রণ করতেন সন্দীপ ঘোষই।
যাবতীয় এই অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন সন্দীপের আইনজীবী জোয়েব রউফ। তাঁর দাবি, 'অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। সব কিছুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না সন্দীপ ঘোষের।'