• বৃষ্টির মধ্যেই ফের ডিভিসিকে নিশানা করলেন মমতা
    আনন্দবাজার | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • একে দু’দিন ধরে নিম্নচাপের লাগাতার বৃষ্টি। তার উপরে বৃহস্পতিবার ফের পাঞ্চেত ও দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার হার বেড়েছে। ফলে নতুন করে চিন্তা বেড়েছে দক্ষিণবঙ্গ নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার ফের জল ছাড়া নিয়ে দুষেছেন ডিভিসি-কে। উল্টো দিকে, বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে সংস্থার কর্মীদের এক দিনের বেতন দান করার আহ্বান জানিয়েছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ।

    মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘চার দিকে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বন্যাত্রাণে গোটা প্রশাসন কাজ করছে। এই দু’দিন আরও বৃষ্টি হয়েছে। বুধবারই ডিভিসি আরও ২৫ হাজার কিউসেক হারে জল ছেড়েছে। এ বারেও কোনও তথ্য রাজ্যকে দেওয়া হয়নি। আমরা নিজেদের সূত্রে সেই তথ্য জেনেছি।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘জলের উপর জল, প্লাবনের উপর প্লাবন, বাংলা ভাসছে।’’

    মুখ্যমন্ত্রী জানান, ডেঙ্গি এখনও কম রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যকর্তাদের বলা হয়েছে ম্যালেরিয়ার দিকে নজর রাখতে। অ্যান্টিভেনম, ডায়েরিয়া-সহ একাধিক রোগের ওষুধ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হাসপাতালে রাখা হচ্ছে। তিনি জানান, মহালয়াতেও ভরা কটালের সম্ভাবনা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, পুরো সময়টায় ডিভিসি পাঁচ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছিল। বন্যা ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় সাহায্য মেলেনি বলেও তাঁর দাবি। এ নিয়ে প্রশ্নে মমতা বলেন, ‘‘বেঙ্গল ‘নিল’ (শূন্য)। মানে না, না, না।’’

    ডিভিসি অবশ্য বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ডিভিসি-র মানবসম্পদ দফতরের সিনিয়র ম্যানেজার রাজেশ কুমার সংস্থার কর্মীদের একটি লিখিত আবেদনে জানান, পশ্চিমবঙ্গে বন্যা দুর্গতদের জন্য এক দিনের বেতন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করুন। এই দান আয়কর ছাড়ের অধীনে পড়বে। যাঁরা দান করতে চান না, কারণ উল্লেখ করে ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথাও বলা হয়। ডিভিসি-র ইডি (সিভিল) অঞ্জনিকুমার দুবে বলেন, ‘‘অতীতেও বহু বার এই ধরনের ত্রাণ তহবিলে কর্মীরা দান করেছেন।’’ যদিও তৃণমূলের দাবি, জল ছাড়ার কারণে রাজ্যের মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তাতে প্রলেপ দিতেই ডিভিসি কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ। তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে এখন এই উদ্যোগ।’’ উল্টো দিকে, সিটু পরিচালনাধীন ডিভিসি শ্রমিক ইউনিয়নের মাইথন শাখার সম্পাদক নির্মল মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এর আগেও প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বেতন দান করা হয়েছে। তবে এ বারে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। তাই আমাদের আপত্তি রয়েছে।’’ ডিভিসি কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে চাননি।

    এ দিন অবশ্য আলিপুর আবহাওয়া দফতর যে বুলেটিন প্রকাশ করেছে, তাতে আগামী কয়েক দিন গাঙ্গেয় বঙ্গের ক্ষেত্রে কোথাও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলা হয়নি। তবে, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে শুক্রবার। এ দিনই মালদহের মানিকচকে বন্যা কবলিত ভূতনির পুলিনটোলায় পাট নিয়ে আসার পথে টিনের ডোঙা উল্টে নিখোঁজ হয়েছেন দুই ভাই।

    আবহবিজ্ঞানীরা জানান, নিম্নচাপ দুর্বল হয়ে গেলেও এ দিন মধ্যপ্রদেশ থেকে গাঙ্গেয় বঙ্গের উপর দিয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তৃত ছিল। তার প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প গাঙ্গেয় বঙ্গের পরিমণ্ডলে ঢুকেছে এবং তার ফলেই দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে।

    এই পরিস্থিতিতে হাওড়ায় উদয়নারায়ণপুরের ডিহিভুররসুটে দামোদরের বাঁধে প্রায় ৭০ ফুট ভাঙন, হুগলির খানাকুলের বলাইচকে মুন্ডেশ্বরীর বাঁধে প্রায় একশো ফুটের ভাঙন চিন্তায় রেখেছে প্রশাসনকে। বৃষ্টিতে ত্রাণের কাজ ব্যাহত হয়েছে। ডেবরার বিডিও প্রিয়ব্রত রাঢ়ী বলেন, “এ ভাবে বৃষ্টি চললে ফের পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)