এই সময়, বোলপুর: তিনি বাড়িতে ফিরতেই জেলা তৃণমূল পার্টি অফিসের দেওয়াল থেকে কোর কমিটির সদস্যদের ছবি ‘ভ্যানিশ’ হয়ে গিয়েছিল। ছবিতে ফিরেছেন অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট। বৃহস্পতিবার কেষ্ট নিজেই ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিলেন, দ্রুত তিনি শক্ত হাতে বীরভূম জেলায় তৃণমূলের লাগাম ধরতে চলেছেন।তাঁর কথায়, ‘কেউ অশান্তি করবেন না৷ সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। কেউ খুঁচিয়ে দিল, আর বাইট দিয়ে দিলেন— তা যেন না হয়।’ এই বার্তা যে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কাজল শেখের উদ্দেশেই, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, তার আগেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন কাজল।
১৮ মাস পর তিহাড় জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সম্প্রতি বীরভূমে ফিরেছেন অনুব্রত। ফলে নড়েচড়ে বসেছেন জেলা তৃণমূলে তাঁর বিরোধীরা। তাঁরাও যে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না, সে বার্তা রাখঢাক না করেই দিয়েছেন কাজল শেখ, জেলা রাজনীতিতে যাঁর সঙ্গে কেষ্টর ‘সুসম্পর্ক’ সুবিদিত। নানুরের থুপসরা এলাকায় সাংগঠনিক বৈঠক করতে গিয়ে কারও নাম না-করে কাজল বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন পাঙ্গা নেবেন, নিন। আমি চুড়ি পরে বসে নেই৷ আমি সব খেলাই খেলতে জানি। যে দিন গোটাব, সে দিন একদম গুটিয়ে দেবো।’ তাঁর সংযোজন, ‘আমি বালির পার্সেন্টেজ খেতে আসিনি৷ দলটা ভালোবেসে করি।’
অনুব্রত জেলায় ফিরতেই মিছিল করে নানুরে ফিরেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ কেরিম খান। তাঁর সঙ্গে কাজলের সাপে-নেউলে সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। এ দিন কাজলের হুঁশিয়ারি, ‘যাঁরা বালির টাকা খান, কিষান মান্ডির টাকা যাঁরা এক সময়ে সিপিএমের সঙ্গে লুট করেছেন, তাঁদের সতর্ক করছি।’ জবাবে কেরিম বলেন, ‘কী বলব বলুন তো! উনি কেন এ সব কথা বলছেন, তার ব্যাখ্যা কোর কমিটির মাথারা দেবেন।’
বীরভূম জেলা পার্টি অফিসের দেওয়াল থেকে কোর কমিটির সদস্যদের ছবি সরে শুধু অনুব্রত মণ্ডলের ছবি টাঙানোতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, এখন কেষ্ট একাই কোর কমিটি! তাই এ দিন বিকেলেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, আবার তাঁকে ছুটে বেড়াতে দেখা যাবে বীরভূমের ব্লকে ব্লকে। সাংবাদিক বৈঠক করে অনুব্রত বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী এখানে এসেছিলেন। তাঁকে ধন্যবাদ জানাই৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছেন, জেলার বিধায়ক, নেতা, সভাধিপতি সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কালীপুজোর পর ব্লকে ব্লকে মিটিং করতে যাব৷’
আবার সক্রিয় ভাবে কি আর অনুব্রতকে রাজনীতির ময়দানে দেখা যাবে? বিরক্ত মুখে তাঁর জবাব, ‘কেন আগের মতো রাজনীতি করব না? তা হলে কেন বলছি, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে?’ জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার এ দিনই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিক বৈঠক করেন অনুব্রত। সেখানে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়েই তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার মেয়েকে ১৬ মাস জেল খাটানো হয়েছে। সে তো নেতা নয়৷ সাধারণ বাড়ির মেয়ে৷ হয়তো ঈশ্বরের চোখে আমি কোনও অন্যায় করেছিলাম। সেই পাপের শাস্তি পেয়েছি৷’
আবেগ কাটিয়ে চেনা ছন্দে ফিরতে কেষ্টর যে বেশিক্ষণ লাগবে না, সেটা বুঝতে পেরেছেন কাজল শেখও। তাই অচিরেই যে তিনি অনুব্রতর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন সে বার্তাও দিয়ে রেখেছেন। তাঁর কথায়, ‘দাদার বাড়ি ভাই যাবে। তার জন্য ঢাক-ঢোল পেটাতে হবে নাকি!’