• হাইকোর্টের রায়ই শেষ ভরসা ট্রামপ্রেমীদের, শ্যামবাজারে জমায়েত
    এই সময় | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: পরিবহণমন্ত্রী ট্রামের ‘বিদায়ঘণ্টার’ বিষয়টা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তবে আশা ছাড়েননি ট্রামের নিত্যযাত্রী ও ট্রামপ্রেমীরা। কলকাতার রাজপথে নিয়মিত গণপরিবহণ হিসেবে ট্রাম চলবে নাকি ধর্মতলা-খিদিরপুর রুটে শুধুই ইতিহাস আর নস্ট্যালজিয়ার একটা লাইন হিসেবে থেকে যাবে—তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলার রায়ই এখন ভরসা শহরের ট্রামপ্রেমীদের। তবে শেষ পর্যন্ত দেশের একমাত্র ট্রাম চলা শহরে ট্রামকে নিছক একটা ‘শো-পিস’ হিসেবে রেখে দেওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত শোনাবে না হাইকোর্ট, এই আশায় বুক বেঁধেছেন ওঁরা।বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোর সামনে ‘সেভ হেরিটেজ, সেভ ট্রাম’ ডাক দিয়ে জমা হয়েছিলেন ট্রামযাত্রীরা। তাঁদের স্লোগান ছিল, ‘তিলোত্তমা নগরীতে ট্রাম বাঁচানোর লড়াই চলছে চলবে।’ গতি নাকি একেবারেই ‘ধীর’, লয় নাকি পুরোপুরি ‘বিলম্বিত’ — এই কারণেই শুধু বয়স্ক লোকজনই ট্রাম পছন্দ করেন, কমবয়সিরা কখনওই ট্রামের পক্ষে নয় বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে।

    বৃহস্পতিবার শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোর জমায়েত অবশ্য অন্য কথাই বলল। ট্রাম বাঁচানোর এই জমায়েতে প্রবীণদের পাশাপাশি নজরে এল বহু তরুণ মুখ। এঁদের মধ্যেই ছিলেন জমায়েতের দুই উদ্যোক্তা কৌশিক দাস ও আরণ্যক চট্টোপাধ্যায়। কৌশিক ও আরণ্যক দু’জনেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

    এ দিনের জমায়েত প্রসঙ্গে তাঁরা ‘এই সময়’-কে বলেন, ‘ট্রাম বন্ধ করে দেওয়াটা কোনও সমাধান নয়। আমাদের দেখতে হবে ট্রামকে কী করে আরও মডিফাই করে ব্যবহার করা যায়। আমরা ধর্মতলা-খিদিরপুর রুটে ট্রামের ওই নাম কা ওয়াস্তে হেরিটেজ রুট আমরা চাই না। আমাদের দাবি, বর্তমানে যে রুটগুলোতে ট্রাম চলছে, সেই রুটে ট্রাম রাখতেই হবে। একই সঙ্গে দেখতে হবে অন্য আর কোন রুটে ট্রাম চালানো যায়।’

    ট্রামযাত্রীদের সংগঠন, ক্যালকাটা ট্রাম ইউজ়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘শহরের রাস্তায় ট্রাম চলবে কি না, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মহামান্য হাইকোর্ট। পরিবহণমন্ত্রী সরকারি মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তবে বিষয়টা এখনও বিচারাধীন। ট্রাম শুধু শহরের ঐতিহ্য বা ইতিহাসই নয়— নস্ট্যালজিয়াও। আমাদের ভরসা হাইকোর্ট কলকাতার এই ভালোবাসার জায়গাটা বহাল রাখবেন।’ ট্রাম টিকে থাকুক, এই নিয়ে অতীতে বহুবার নিজেদের মত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট মানুষজন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।

    তিনি বলেন, ‘দাবি করা হয়, ট্রামের জন্য নাকি ট্র্যাফিকের সমস্যা হচ্ছে। তেমন হলে ট্রামকে নিউ টাউনের মতো অপেক্ষাকৃত ফাঁকা কোনও জায়গায় চালানো যেতে পারে।’ অন্য দিকে পেশায় চিকিৎসক এবং নেশায় কলকাতার ইতিহাস নিয়ে গবেষণাকারী দেবাশিস বসুর মত, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে ট্রাম বন্ধ করে দেওয়ার পরেও ফেরত আনা হয়েছে। কিছু দিন পরেই ওই তালিকায় কলকাতার নাম যোগ হবে। পরিকাঠামো থাকার পরেও আজ ট্রাম বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কয়েক বছর পর বহু অর্থ ব্যয়ে আবার ট্রাম ফিরবে।’
  • Link to this news (এই সময়)