কচুরিপানায় ১ ইঞ্চি দুর্গা! শৈল্পিক দক্ষতায় চমক বারাকপুরের যুবকের
প্রতিদিন | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
অর্ণব দাস, বারাকপুর: আঁকা শেখার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই ছিল মাটির মূর্তি তৈরির শখ। আর্ট কলেজ থেকে স্নাতকের পর সেই শখ ঝোঁকে মিনিয়েচারের প্রতি। ২৪ বছর আগে প্রথমবার উমার আগমনের সময় মাটির মিনিয়েচার প্রতিমা তৈরি করেন পলতার দেবপ্রসাদ মালাকার। তার পর থেকে প্রতিবছরই মায়ের মর্তে আগমনের আগে বিভিন্ন জিনিসের দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছেন এই শিল্পী।
এ বছর কচুরিপানার আঁশ দিয়ে তৈরি করেছেন মা দুর্গার প্রতিমা। সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিওতে তিনি দেখেন কচুরিপানা শুকিয়ে আঁশ বার করে তৈরি হচ্ছে শাড়ি। বিষয়টি মনে ধরে যায় দেবপ্রসাদের। এর পর তিনি একই পদ্ধতিতে কচুরিপানার আঁশ বার করে তৈরি করেন ১ ইঞ্চির মা দুর্গা। শিল্পীর কথায়, “সুক্ষ কাজ। তাই ধৈর্য ধরে তৈরি করতে হয়েছে। এবছরের প্রতিমা তৈরি করতে সময় লেগেছে দশ-বারো দিন। পুরো প্রতিমাই তৈরি হয়েছে কচুরিপানার আঁশ দিয়ে। আঁশ থেকে ডার্ক এবং লাইট দুরকম ফেব্রিক বেরিয়েছিল। সেগুলি দিয়েই প্রতিমার রংয়ের শেড হয়েছে। মায়ের চোখ আঁকতে কালো রং, আর আঁশ জুড়তে আঠা। এছাড়া আর কিছুই ব্যবহার করা হয়নি।”
ছয় ইঞ্চি, আট ইঞ্চির দুর্গা প্রতিমার অর্ডার তাঁর কাছে আসে বিদেশ থেকে। সেগুলিও তিনি তৈরি করেন। এছাড়াও সর্বজনীন পুজোর জন্য বড় প্রতিমা, মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহৃত ফাইবারের নানান শিল্পও তৈরি করেন দেবপ্রসাদ। পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সে অ্যানিমেশনের কাজ করা ও শেখানো, সঙ্গে আঁকাও সেখান।
তবে কাজে যত ব্যস্ততাই থাক না কেন, প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আগে সে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে মিনিয়েচার মাতৃপ্রতিমা তৈরি করেন নিয়ম মেনে।
শুরুটা হয়েছিল ২০০০ সালে মাটির তৈরি মিনিয়েচার দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে। এর পর দেশলাই কাঠি, তুলো, সুতো, পাট, টিস্যু পেপারের, টুথপিক, ধানের খোসা, রবার, চক, তার, বাদামের খোসা, কুমড়োর বীজের খোসা, নারকেল পাতা, সুপারির খোল দিয়ে তৈরি করেছেন দুর্গা প্রতিমা। ২০০৩-০৪ সালে সবচেয়ে সবচেয়ে ক্ষুদ্র ২ মিলিমিটারের দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে নজির গড়েন তিনি। তখনই সকলের নজরে আসে বারাকপুর পলতার এই শিল্পী। এর পর ২০১৪ সালে মসুর ডালে সরস্বতী মূর্তি তৈরি করে রাজ্য সরকারের থেকে সম্মানিত হন দেবপ্রসাদ। তাঁর এই মিনিয়েচার আর্ট বহুবার বহু জায়গায় এক্সিবিশন হয়েছে। দুর্গাপুজোর সময় বহু মণ্ডপে গিয়েও সে এই মিনিয়েচার দুর্গাপ্রতিমা প্রদর্শন করেছেন। দেবপ্রসাদ বলেন, “কাজের ব্যস্ততায় শেষ কয়েক বছর পুজোয় এক্সিবিশন করা সম্ভব হয়নি। তবে এবছর(Durga Puja 2024) যদি কোন পুজো কমিটি কচুরিপানার আঁশ দিয়ে তৈরি দুর্গাপ্রতিমা সহ অন্যান্য মিনিয়েচার দুর্গাপ্রতিমা প্রদর্শিত করতে চান, আমি রাজি।”