জাতীয় সড়ক তৈরিতে মাটির বিকল্প হিসেবে আবর্জনাকে কাজে লাগাতে বলল কেন্দ্র। নবান্ন সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে এই মর্মে রাজ্যগুলিকে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। তাতে বলা হয়েছে, জাতীয় সড়ক নির্মাণে বিপুল পরিমাণ মাটি লাগে। যার বড় অংশই আসে কৃষি জমি থেকে। কিন্তু সেখান থেকে ইচ্ছেমতো মাটি তোলায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। প্রভাব পড়ছে বাস্তুতন্ত্রেও।তাই বিকল্প হিসেবে পুরসভার জড়ো করা জঞ্জাল, প্লাস্টিক, ভাঙা কংক্রিটের স্ল্যাব ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্ট (শিল্প-বর্জ্য) ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে ওই নির্দেশিকা।
দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, এই ব্যবস্থায় একদিকে জমির চরিত্র বদল আটকানো যাবে। পাশাপাশি শহর-এলাকায় প্রতিদিন যে বিপুল পরিমাণ আবর্জনা তৈরি হয়, তাকেও ঠিক ভাবে কাজে লাগানো যাবে। অনেকখানি কমবে পুরসভাগুলির জঞ্জাল অপসারণের খরচ।
সরকারি সূত্রে খবর, রাস্তা তৈরির কাজে শহরের আবর্জনাকে কাজে লাগানোর জন্য কেন্দ্র দিল্লিতে একটি ‘পাইলট প্রোজেক্ট’ হাতে নিয়েছে। যার অঙ্গ হিসেবে দিল্লি-মুম্বই এবং আহমেদাবাদ-ধোলেরা এক্সপ্রেসওয়ে সম্প্রসারণে কাজে লাগানো হয়েছে আবর্জনা। সেটাকেই এ বার দেশে ছড়িয়ে দিতে চাইছে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। এ জন্য রাজ্যগুলিকে আর্থিক সহযোগিতাও করা হচ্ছে। শহরাঞ্চলে যে আবর্জনা তৈরি হয়, তা প্রসেসিংয়ের জন্য নতুন স্কিম চালু করেছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। এতে পুরসভাগুলিকে বিশেষ আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে।
নবান্নের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘কলকাতার মতো বড় শহরে যত জঞ্জাল উৎপন্ন হয়, তা জমিয়ে রাখতে গেলে ধাপার মতো বড় ডাম্পিং গ্রাউন্ড লাগবে। আদালতের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞায় শহরাঞ্চলের ভিতরে ডাম্পিং গ্রাউন্ড বানানো যাচ্ছে না। ফলে শহরের জঞ্জাল অপসারণ সরকারের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একে রাস্তার কাজে লাগানো গেলে খুবই ভালো হয়।’
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ২,৩০৪টি ডাম্পিং সাইট রয়েছে, যেখানে শহরের আবর্জনা জমা হয়। তাকেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পৃথকীকরণ করে রাস্তার কাজে লাগানো হবে।
কেন্দ্রের নির্দেশিকা অনুযায়ী, রাস্তা তৈরির কাজে জঞ্জাল ব্যবহারের জন্য ডাম্পিং সাইটে বায়ো মাইনিংয়ের সুবিধে থাকতেই হবে। কোনও পুরসভা তা করতে না পারলে কেন্দ্র অর্থসাহায্য করবে। না হলে জাতীয় সড়ক নির্মাণের কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থা ডাম্পিং সাইটে নিজেদের খরচে বায়ো মাইনিংয়ের ব্যবস্থা করবে।
কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘আবর্জনা পুনর্ব্যবহারে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছি। প্লাস্টিক দিয়ে এখন রাস্তা বানানো হচ্ছে। পাথুরিয়াঘাটায় কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ডিমোলিশন ওয়েস্ট দিয়ে পেভার ব্লক তৈরি করছি। প্রযুক্তি আরও উন্নত হচ্ছে। নতুন কোনও প্রস্তাব এলে অবশ্যই ভেবে দেখব।’