• রামায়ণের ‘সাতকাণ্ড’ ফুটে উঠল বালুচরিতে
    এই সময় | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • দুর্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বাঁকুড়া

    বালুচরির ফ্যাশন ট্রেন্ডে এ বার রামায়ণের কাহিনি। বিষ্ণুপুরের শিল্পী অমিতাভ পাল প্রতি বছরই তাঁর তৈরি শাড়িতে সাহিত্য-সংস্কৃতির রূপ ফুটিয়ে তোলেন। তাঁর বুননে কখনও উঠে এসেছে শকুন্তলার কাহিনি, কখনও বা আদিবাসী নৃত্য। এ বছর তাঁর হাতের জাদুতে শাড়ির আঁচল ও জমিতে ফুটে উঠেছে বাল্মীকির রামায়ণ।তবে এক একটি শাড়ি তৈরি করতে সময়ও লেগেছে বিস্তর। শিল্পী জানাচ্ছেন, এ পর্যন্ত ৫টি রামায়ণ শাড়ি তিনি তৈরি করতে পেরেছেন, যার এক একটির জন্য সময় লেগেছে ২৩ দিন। প্রতিটি শাড়ি তিনি বিক্রি করেছেন ৩৫ হাজার টাকায়। আপাতত ৪টি শাড়ি তিনি বিক্রি করেছেন রাজ্য সরকারের সংস্থা তন্তুজ ও কলকাতার দু’টি নামী বিপণি সংস্থাকে। একটি শাড়ি রেখে দিয়েছেন নিজের কাছে। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, আগামী দিনে এই ডিজাইনে তৈরি তাঁর সব শাড়ি কিনে নেবে তন্তুজ ও বিশ্ববাংলা।

    বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরের কৃষ্ণগঞ্জের বাসিন্দা অমিতাভ জানিয়েছেন, শাড়ি তিনি বুনলেও এর নকশা এঁকে দিয়েছেন ওই এলাকারই আর এক শিল্পী ভীম দাস। চার মাস আগে বুননের কাজে নামেন অমিতাভ। তাঁকে সাহায্য করেছেন আরও দুই শিল্পী। এ বারের বালুচরির ডিজাইন নিয়ে অমিতাভ বলেন, ‘শাড়ির আঁচলের ভিতরের অংশে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুষ্পক রথে সীতাকে হরণ করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য।

    সেখানে দেখা যাচ্ছে রাবণকে বাধা দিতে আসছে জটায়ু। আর আঁচলের শুরুতে রয়েছে যজ্ঞের ঘোড়া আটকে রাখা লব-কুশ, আশ্রমে লব-কুশকে বাল্মীকির পড়ানো, রাম, লক্ষ্মণ, সীতার বনবাস যাত্রার মতো ‘সাত কাণ্ড’। শাড়িগুলো তৈরি হয়েছে লাল, রানি, সবুজ, তসর ও পেস্তা কালারে।

    কয়েক বছর ধরে সাবেকিয়ানা থেকে বেরিয়ে বালুচরিতে বৈচিত্র আনার চেষ্টা করছেন নবীন প্রজন্মের শিল্পী বছর ৪৬-এর অমিতাভ। তাঁর শাড়িতে উঠে এসেছে মন্দিরের গায়ের টেরাকোটা, রামায়ণ, মহাভারত আর পুরাণের খণ্ডচিত্র। বুনেছেন মুগা, কটকি, এরি, নকসিকাঁথার ডিজাইন। বিগত দিনে তাঁর হাতে তৈরি রূপশালী, তিনকন্যা, নবাবিশাড়ি রীতিমতো সাড়া ফেলেছিল।

    সাম্প্রতিক অতীতে বিভিন্ন থিমের উপর দেড়লাখি বালুচরি, কারুকলা, অরুণিমা, অষ্টমী, তিনলাখি বালুচরিও নজর টেনেছে ভালো। আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়ে বালুচরি শাড়ি তৈরির জন্য একাধিকবার রাজ্যসম্মান পেয়েছেন আমিতাভ। এ ছাড়া সংবর্ধনা পেয়েছেন দেশের ৬টি রাজ্য থেকে। তিনি বলেন, ‘সারা বছর যা শাড়ি তৈরি হয় তা রাজ্য সরকারের তন্তুজ ও বিশ্ববাংলা কিনে নেয়। এ ছাড়া শাড়ি যায় কলকাতার নামী বিপণিতে।’ অমিতাভ আরও বলেন, ‘প্রতি বছর নতুন ডিজাইনে শাড়ি তৈরির জন্য আমাকে উৎসাহ এবং আর্থিক সহায়তা দেয় তন্তুজ। আমি ওদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
  • Link to this news (এই সময়)