তৃণমূল ছাত্র পরিষদ থেকে সাসপেন্ড রাজন্যা-প্রান্তিক
এই সময় | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে একটি শর্ট ফিল্ম তৈরি হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে 'আগমনী'। এই ছবিটি বানানোর জেরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ সভাপতি পদ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে প্রান্তিক চক্রবর্তী এবং যাদবপুর-ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজন্যা হালদারকে। সম্পর্কে তাঁরা স্বামী-স্ত্রীও!শুক্রবার রাতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই দু'জনকেই আপাতত দল বিরোধী কাজের অভিযোগে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। যতক্ষণ না এই ঘটনায় তাঁরা দোষ মুক্ত হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সংগঠনের সঙ্গে প্রান্তিক ও রাজন্যার কোনও সম্পর্ক থাকবে না।
প্রসঙ্গত, একদিন আগেই, অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার (২৬.০৮.২০২৪) প্রান্তিকের পরিচালনায় 'আগমনী' শর্ট ফিল্মটির পোস্টার মুক্তি পায়। সেই পোস্টারের মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন রাজন্যা। পোস্টারে দেখা যাচ্ছে তিনি ডাক্তারদের অ্যাপ্রন পরে আছেন। তাঁর গলায় রয়েছে স্টেথোস্কোপ, মাথায় রয়েছে কনের মুকুট এবং নাকে নথ। 'আগমনী' নামটির সঙ্গে রয়েছে আরও একটি লাইন-- তিলোত্তমাদের গল্প। এর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। বহু মানুষ এই সিনেমা বানানোর বিষয়টিকে সমালোচনার চোখে দেখছেন। অনেকেই বলেন, এমন একটি ঘটনা নিয়ে সিনেমা বানিয়ে আসলে নিজেদের আত্মপ্রচার করার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সূত্রের খবর, শর্ট ফিল্মটির পোস্টার ভাইরাল হতেই প্রান্তিকদের ফোন করেন রাজ্যের এক মন্ত্রী এবং সাধারণ সম্পাদকও। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বিস্তারিত খোঁজ নেন। এই সময়ে দাঁড়িয়ে এমন ছবি না বানানো গেলেই ভালো হতো বলে পরামর্শ দেন তাঁরা। প্রান্তিকরাও বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দু'পক্ষের কথা বলার পরও কোনও সমাধান সূত্র বের হয়নি।
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'আরজিকর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে একটি শর্টফিল্মের খবর এসেছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা তিলোত্তমার ঘটনার ন্যায়বিচার চাই। এই স্পর্শকাতর বিষয়কে প্রচারে ব্যবহার করার চেষ্টার আমরা বিরোধী। যে কোনও ব্যক্তির স্বাধীনতা আছে সৃষ্টিতে। কিন্তু তদন্তাধীন এই মর্মান্তিক ঘটনাকে দলের সঙ্গে জড়িত কেউ যদি ছবির প্রচারে ব্যবহার করেন, দল তাঁর দায়িত্ব নেবে না। দল এ বিষয়ে কোনও অনুমতি দেয়নি, দল জানত না। যে বা যাঁরা এর সঙ্গে জড়িত, খতিয়ে দেখে, কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতৃত্বকে বলা হয়েছে।'
কুণালের এই বক্তব্যের পরই জানা যায়, তৃণমুল ছাত্র পরিষদ তাঁদের সাসপেন্ড করেছে। তৃণাঙ্কুরের কথায়, 'এই ধরনের বিষয়কে দল অনুমোদন করে না। তাই তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।'
এ বিষয়ে কী বলছেন প্রান্তিক-রাজন্যা?
তাঁরা দু'জনেই বিষয়টিকে শিল্পের আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করছেন। প্রান্তিকের বক্তব্য, 'দলের সিদ্ধান্ত বা দলীয় ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু আমি একজন শিল্পী। সেই স্বাধীনতা আমার থাকা উচিত। তাকে সম্মান জানানো উচিত।' রাজন্যার দাবি, 'শর্ট ফিল্মটি সমস্ত নির্যাতনের বিরুদ্ধে বার্তা দিতে তৈরি করা হয়েছে। নারী-পুরুষ উভয়েরই নির্যাতনের বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য নেই। সিনেমা না দেখেই মানুষ কী ভাবে শুধু একটা পোস্টার দেখে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আমার জানা নেই।' প্রান্তিকের এও বক্তব্য, 'আগে দেখুন না সিনেমা, তারপর যা বলবেন আমি মাথা পেতে গ্রহণ করব।'
সূত্রের খবর, সিনেমা দেখার প্রস্তাব নেতৃত্বকেও দিয়েছিলেন প্রান্তিকরা। কিন্তু তাতে চিড়ে ভেজেনি। এখন দেখার, পূর্ব ঘোষণা মতো এই শর্ট ফিল্মটি মহালয়ার দিনেই ইউটিউবে আপলোড হয় কি না। পরিচালক প্রান্তিক অবশ্য বলছেন, 'দেখি কী করি।' তৃণাঙ্কুর জানিয়েছেন, শর্ট ফিল্ম কী আছে তা শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।