এটা মানুষেরই আন্দোলন, গ্রামও আছে পাশে, দাবি চিকিৎসকদের
এই সময় | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এই সময়: নিছক ডাক্তারদের নয়, আরজি কর আন্দোলন আদতে গণ-আন্দোলনের চেহারা নিয়েছে — শুক্রবার এসএসকেএমের প্রেক্ষাগৃহে গণ-কনভেনশনে এই বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা করলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের অভিযোগ, শাসক শিবির থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে, আরজি কর আন্দোলন শুধু চিকিৎসকদের দাবি-দাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই প্রচার যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এ দিনের গণ-কনভেনশন থেকে সেটাই নানা ভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন চিকিৎসকরা।একইসঙ্গে গণ-কনভেনশন থেকে জুনিয়র চিকিৎসকেরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন, তাঁরা কিছুতেই আন্দোলনের সলতে নিভতে দেবেন না। উল্টে ঝাঁঝ বাড়বে। সেই লক্ষ্যে এ দিন দু’টি আন্দোলন কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তাঁরা। ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানির আগের দিন সন্ধ্যায় বিচারের দাবিতে রাজপথ থেকে গলিপথ ভরানোর আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। ২ অক্টোবর মহালয়ার দিন বিচারের দাবিতে ধর্মতলায় মহাসমাবেশ হবে। জুনিয়র চিকিৎসকরা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে সেই সমাবেশে অংশ নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন।
তবে এ দিনের কনভেনশন-এ চিকিৎসকরা সব থেকে বেশি জোর দিয়েছেন আরজি কর আন্দোলনকে গণ-আন্দোলন হিসেবে ‘প্রজেক্ট’ করতে। আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার বলেন, ‘এই আন্দোলনের কোনও আলাদা মুখ নেই। মানুষই মুখ। এটা গণ-আন্দোলন। শুধু হাসপাতালে নয়, সমাজের আর কোথাও যাতে একজন মহিলাকেও ধর্ষিতা না হতে হয়, তার জন্যই আমাদের লড়াই। সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষ এই লড়াইতে সামিল হয়েছেন।’
পিজির প্রফেসর দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, ‘অনেক মানুষ এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্যই এটাকে গণ-আন্দোলন বলছি।’ জুনিয়রদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, ‘গণ শব্দটি জনগণের অ্যাজেন্ডার সঙ্গেও মিশতে হবে। এটা যেন কখনই ডাক্তারদের আন্দোলন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না হয়। এটা যেন সামাজিক আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি পায়। নয়তো ১৫ বছর বাদে শুধু ডাক্তাররাই আরজি কর আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করবেন, সমাজ করবে না।’
চিকিৎসক অর্ণব সেনগুপ্ত এই আন্দোলনকে আরও দীর্ঘতর এবং শক্তিশালী করতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে নিয়ে যৌথ মঞ্চ গড়ার পক্ষে সওয়াল করেন। এসএসকেএম-এর ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা যে কোনও হাসপাতালে ঘটতে পারে, তা কল্পনাও করা যায় না। এর সঙ্গে যাঁরা সরাসরি এবং পরোক্ষ ভাবে যুক্ত, তাঁদের সকলকে চিহ্নিত করা হোক।’
৯ অগস্ট আরজি করের ঘটনার পর যে নজিরবিহীন আন্দোলন আছড়ে পড়েছে রাস্তায়, তাতে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে থেকেছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। তবে ইদানীং সমাজের একটি অংশ বলতে শুরু করেছে, এতদিন যে আন্দোলন সাধারণ মানুষের ছিল, ধীরে ধীরে তা ডাক্তারদের নির্দিষ্ট দাবি-দাওয়ার আন্দোলন হয়ে গিয়েছে। আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে এই ন্যারেটিভ যে ভাঙতে হবে তা বিলক্ষণ বুঝে গিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরাও।
তাঁদের দাবি, এই আন্দোলনের কোনও প্রভাব গ্রামে পড়েনি বলেও আরও একটি ন্যারেটিভ কৌশলে তৈরির চেষ্টা চলছে। জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো সেই তত্ত্ব খণ্ডন করে বলেন, ‘গোটা বাংলা জুড়েই থ্রেট কালচার চলছে। বন্যায় গ্রামে চিকিৎসা করতে গিয়ে দেখেছি, তাঁরাও থ্রেট কালচারের শিকার।’ চিকিৎসকদের দাবি, গ্রামও আছে তাঁদের পাশে।