• অভিযোগ গুরুতর, দোষ প্রমাণে হতে পারে মৃত্যুদণ্ডও
    এই সময় | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: একজন টালা থানার প্রাক্তন ওসি। অন্যজন চিকিৎসক তথা হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ। দু’জনেই পদমর্যাদায় সামাজিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছেন। আরজি করের ধর্ষণ-খুন মামলায় এই দু’জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই। এঁদের দু’জনের বিরুদ্ধে যে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, তা প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে— এই যুক্তিতেই দু’জনের জামিন খারিজ করেছে শিয়ালদহ আদালত।গত বুধবারই এই দু’জনের জামিনের আর্জি নামঞ্জুর করে আদালত। কিন্তু তাঁদের জামিন যে যুক্তিতে বিচারক খারিজ করেছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন আইনজ্ঞদের একাংশ। টালার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল ও আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের আইনজীবীরা আদালতে বারবার দাবি করেছেন, দু’জনের বিরুদ্ধেই যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই ধারাগুলি জামিনযোগ্য।

    তাঁদের যে ভাবে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই, তা-ও আইনি দিক থেকে ঠিক হয়নি বলে যুক্তি দিয়েছেন আইনজীবীরা। কিন্তু শিয়ালদহ কোর্টের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর নির্দেশে যে ভাবে অভিযুক্তদের সামাজিক অবস্থান ও অপরাধের গুরুত্ব বিচার করে জামিন-আর্জি খারিজ করেছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মত আইনজীবীদের বড় অংশের।

    বিচারক তাঁর রায়ে বলেছেন, ‘দু’জনের সামাজিক অবস্থান মোটেই উপেক্ষা করার মতো নয়। অন্য দিকে, এই মামলায় যে অভিযোগ উঠেছে, তা অত্যন্ত গুরুতর এবং অপরাধ প্রমাণে বিরলের মধ্যে বিরলতম হিসেবে মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। তাই দু’জনকে জামিন দেওয়া হলে তা বিচার ব্যবস্থায় সমানাধিকারের পরিপন্থী হবে বলে মনে করছে আদালত।’

    বিচারক এটাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন, কেউ কোনও অপরাধের অকুস্থলে না-থাকলেই তিনি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন না, এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। কেউ অন্যদের সহযোগিতায় অপরাধ করিয়ে থাকতে পারেন। সেই কারণেই ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩(৫) (পূর্বতন ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪ ধারা, যার অর্থ একই উদ্দেশ্যে অপরাধ) ধারা প্রয়োগ করা যায়।

    বস্তুত আরজি করের ধর্ষণ-খুন মামলায় সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগে কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করা হলেও আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার ও নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, এর পিছনে বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে। আরও অনেকে এর সঙ্গে জড়িত। সিবিআই সেই দিকটিও খতিয়ে দেখছে এবং তার সূত্র ধরে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের খোঁজে তদন্ত চালাচ্ছে। শিয়ালদহ কোর্টের এসিজেএম তাঁর রায়ে জানিয়েছেন, সিবিআই তদন্ত পূর্ণ গতিতেই চলছে।

    ঘটনা হলো, ধর্ষণ-খুন মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে সর্বশেষ শুনানিতে একটি স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই। সেই রিপোর্ট দেখে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ মন্তব্য করেছিল এই রিপোর্ট ‘খুবই ডিস্টার্বিং ও উদ্বেগজনক।’ সিবিআইকে এই মামলার রহস্যভেদে আরও সময় দিতে হবে বলেও জানিয়েছিলেন সিজেআই। শিয়ালদহ কোর্টের বিচারকও তাঁর রায়ে যা বলেছেন, তাতে সিবিআইয়ের কেস ডায়েরি দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেই দাবি আইনজীবীদের একাংশের।
  • Link to this news (এই সময়)