• মূল্যবোধ থেকে বিদেশি ভাষা বা কৃত্রিম মেধা, নানা পাঠক্রমের সম্ভার বিবেক তীর্থে
    আনন্দবাজার | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সমাজের নানা ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে মূল্যবোধের অবক্ষয়। সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় মূল্যবোধের অভাবের বিষয়টি আরও যেন প্রকট হয়েছে। মানুষের মনে সেই মূল্যবোধকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে নিউ টাউনের রামকৃষ্ণ মিশন সেন্টার ফর হিউম্যান এক্সেলেন্স অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স, বিবেক তীর্থে শুরু হয়েছে ‘ভ্যালু ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম’। শিক্ষক, চিকিৎসক, পুলিশ, পড়ুয়া, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে যে কেউ এই পাঠক্রমে ভর্তি হতে পারবেন। শুধু ভ্যালু ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামই নয়, ভাষা শিক্ষা থেকে শুরু করে কৃত্রিম মেধার নানা যুগোপযোগী পাঠক্রমও রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

    নিউ টাউনের ইকো পার্কের এক নম্বর গেটের কাছে রামকৃষ্ণ মিশনের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের নানা প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা দানে ব্রতী হয়েছে। সেই সঙ্গে চাকরিজীবী বা সাধারণ পড়ুয়াদের জন্যও তারা নিয়ে এসেছে নানা আধুনিক পাঠক্রম ও ভাষা শিক্ষা। সংস্থার সচিব স্বামী বিশোকানন্দ বলেন, ‘‘অনলাইন নয়, আমরা অফলাইনে এই সব পাঠক্রম করাতে বেশি আগ্রহী। এখানে এসে প্রশিক্ষণ নিলে সকলেই রামকৃষ্ণ মিশনের ভাবধারা ও মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এক জন মানুষের চরিত্র গঠনও আজকের দিনে খুব জরুরি। যা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করছে বছরের পর বছর ধরে।’’

    পাঁচ একর জমির উপরে তৈরি হওয়া এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিবেক তীর্থ ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করেছিল। তার পরে এগারোতলা এই ভবনে বিভিন্ন ধরনের পাঠক্রম শুরু হয় ধীরে ধীরে। স্বামী বিশোকানন্দ জানান, ভাষা শিক্ষার স্কুল অব ল্যাঙ্গোয়েজে ইংরেজি, সংস্কৃত, জাপানি, স্প্যানিশ, জার্মান এবং ফরাসি শেখানো হচ্ছে। অন্য দিকে, কম্পিউটার সেন্টারে কৃত্রিম মেধার উপরে রয়েছে এআই মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠক্রম। রয়েছে সফটওয়্যার ডেভেলপার, এআই ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ এক গুচ্ছ পাঠক্রম।

    বর্তমানে বিশ্বের যে কোনও দেশে কাজ করতে গেলে সেখানকার স্থানীয় ভাষা শিখে নেওয়া খুব জরুরি। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় ভাষা না জানলে কাজ মেলে না। যেমন, জাপানে কাজ করতে গেলে জাপানি জানা দরকার। ইউরোপের কোনও দেশে কাজ করতে গেলে স্প্যানিশ, জার্মান, ফরাসি বা ইটালিয়ান জানা জরুরি। ভাষা শিক্ষার পাঠক্রমের কোঅর্ডিনেটর দেবযানী নন্দী জানালেন, নিউ টাউনের বিবেক তীর্থে আধুনিক পদ্ধতিতে ইংরেজি, সংস্কৃত, জাপানি, স্প্যানিশ, জার্মান এবং ফরাসি শেখানো হচ্ছে। এ ছাড়া, ডাচ ও চিনা ভাষা শেখানোর পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। যাঁরা অফিসের সময়ের পরে ভাষার প্রশিক্ষণ নিতে চান, তাঁদের জন্যও আলাদা সময়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

    কম্পিউটার সেন্টারের কোঅর্ডিনেটর পার্থসারথি ঘোষ জানান, কৃত্রিম মেধা এবং মেশিন লার্নিংয়ের পাঠক্রমের পাশাপাশি কাস্টমার কেয়ার এগ্‌জ়িকিউটিভ ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পাঠক্রমও করানো হচ্ছে। ইউটিউব বা সমাজমাধ্যমের সাহায্যে কেউ কী ভাবে নিজের পণ্যের প্রচার করবেন, সেই কৌশল ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে শেখা যাবে। শিক্ষকদের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

    স্বামী বিশোকানন্দ জানান, কৃত্রিম মেধার পাঠক্রমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাঁরা যাদবপুরে কৃত্রিম মেধা নিয়ে পড়তে চান, অথচ আসন পূরণ হয়ে গিয়েছে বলে ভর্তি হতে পারেননি, তেমন কিছু পড়ুয়া ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন। এই পাঠক্রমের ক্লাস যাদবপুরের সঙ্গে একযোগে হবে। প্রশিক্ষণ দেবেন যাদবপুরের শিক্ষকেরাই।

    কলকাতার উপকণ্ঠে নিউ টাউনে রামকৃষ্ণ মিশনের এই বিবেক তীর্থ এলাকার মানুষের কাছে ক্রমেই ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে। শুধু এলাকার বাসিন্দারাই নন, কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকেও অনেকেই এখানে আসছেন বিভিন্ন পাঠক্রমে ভর্তি হতে। কয়েক জন পড়ুয়া জানালেন, এখানে বিভিন্ন ধরনের পাঠক্রমে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি রামকৃষ্ণ মিশনের ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। এখানে এসে তাঁরা বুঝেছেন, এখন বহু জায়গায় অনলাইনে পড়াশোনা হলেও অফলাইনে পড়াশোনার গুরুত্ব কিছুমাত্র কমেনি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)